নেত্রকোনা ১ আসনের (দূর্গাপুর-কলমাকান্দা) ৯ম জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্য আলহাজ্ব মোশতাক আহমেদ রুহীর পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবর রহমান স্যারের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্ববান সাদামনের উদার মানুষ, সৎ-সাহসী, ন্যায়পরায়ণ ও অসাম্প্রদায়িক। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একসময়ের দুর্গম জনপদ কলমাকান্দায় সর্বপ্রথম উনার নামই পাওয়া যায়। তিঁনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের একজন প্রগতিশীল স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন।

শিক্ষক হিসেবে সকল রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠক, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহত্তর ময়মনসিংহের পরিচিত মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা কলেজে শিক্ষক থাকাকালীন অবস্হায় বিএনসিসির দায়িত্বে ছিলেন। তৎকালীন সময়ে স্যার যে অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা সেসময়ের মুক্তিযোদ্ধা ছাত্ররা বলে থাকেন।

আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিঁনি দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গরীব অথচ মেধাবী এমন ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তায় সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন। স্যারের নিজ হাতে গড়া অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত আছেন।

খেলাধুলায় স্যারের অনেক অবদান ছিল। ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্হায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাছাড়া আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র সংসদের ক্রীড়া কমিটির প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালের পরে নীতির প্রশ্নে আপোষহীন ও ভিন্নমতের কারণে স্যারকে বিএনপি-জামায়াত সরকার ৭ বার বদলি করে। এছাড়াও ওএসডি করা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেত্রকোনা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স তিঁনিই চালু করেছিলেন। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর নেত্রকোনা বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের একত্রিত করে ময়মনসিংহে অস্হায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ পর্যন্ত সেখানে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেছেন। তিঁনি একজন বিবেকবান মানুষ ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি আর্তমানবতার জন্য বিভিন্ন সমাজসেবামুলক কাজে জড়িত থাকতেন। সেসময়ে তিঁনি সন্ধানী বিজ্ঞান চক্রের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন।

ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল থেকে তুখোড় ছাত্রনেতা সগীর সাহেবের সাথে স্বাধীনতাপূর্ব বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিকামী ছাত্রজনতার সাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশ পদার্থ বিজ্ঞান সমিতির নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে প্রিয়নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়া-মুজিবর রহমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্যানেল নির্বাচিত হয়েছিল। অসাধারণ গুণী এ মানুষটি ২১শে জানুয়ারী ২০১৪ সালে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

পরম শ্রদ্ধাভাজন স্যারের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রইরো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী। স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং মহান আল্লাহ্‌পাক স্যারকে বেহেশত নসীব করুন। আমিন।