ঈদের আগেও রুই মাছের কেজি ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। সেই রুই মাছের দাম কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে। মাছের বাজারে ক্রেতাদের অসন্তোষ স্পষ্ট। বেড়েছে কাতলা মাছের দামও। আর চিংড়ি রয়ে গেছে আগের মতো বাড়তি দামেই, ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে নদীর চিংড়ি।

শুধু তাই নয়, দাম বেড়েছে মুরগির দামেও। দাম কমেনি ডিমেরও। আর আগের মতোই ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু; যা নিয়ে নাখোশ ক্রেতারা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুর উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজার ঘুরে বাজার দরের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, অনেক কিছুরই দাম বাড়তি। ডিমের দাম কমছেই না। যারা মাংসের অভাব মাছে পূরণ করেন তাদের জন্য দামে হাপিত্যেস দশা।

মিরপুর উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজার ঘুরে জানা যায়, সাদা কিংবা লাল যেটাই নেন আলুর কেজি ৩০ টাকা। ভর্তার জন্য জনপ্রিয় জাম আলু ৪০ টাকা, দেশি ছোট ঝুরি আলু ৩৫ টাকা। কোরবানির ঈদের পর পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমেছে, কিন্তু বেড়েছে রসুনের দাম।

আমাদের মতো মধ্যবিত্ত এসব নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছি।

সবুর মিয়া নামে ক্রেতা বলেন, ছয় মাস ধরে এই দামেই কিনতে হচ্ছে। দাম একটুও কমছে না। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত এসব নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছি।

ক্রেতা মনসুর আলী বলছেন, কিনে খাবো এমন সামর্থ্যের মধ্যে শুধু শাক ও কিছু সবজি আছে। লাউ তো ছোঁয়া যাচ্ছে না। আলু আর যেন আমাদের নয়। মাছের বাজারও গরম।

মাছের বাজারেও অস্বস্তি স্পষ্ট। দর-দাম করে মাছ কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।

বিক্রেতারা জানান, নদীর চিংড়ির কেজি ৬০০ টাকা, তবে লাল চিংড়ি ৫০০ টাকায় মিলছে। চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৬০ টাকা।

রুই মাছ দিন দিন যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে, কেজি ওজনের রুই ৩৬০ টাকা। কাতলাও কেজি ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ টাকা। পাল্লা দিয়ে পাঙ্গাসও ধরে ফেলেছে তেলাপিয়া মাছকে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

মাছ বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ দিন আগেও রুই-কাতলা মাছ মিলতো সর্বোচ্চ ২৮০/৩০০ টাকায়। ক্রেতারা দুই কেজির জায়গায় এক কেজি কিনছেন। বর্ষার মাঝে কমতে পারে মাছের দাম।

পাশেই কাদের গোশতো বিতান নামক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ডে লেখা দামে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস কেজি ৬৮০ টাকা, কোরবানির ঈদের পর থেকে বন্ধ খাসির মাংসের দোকান।

রমজানের ঈদের শুরুতে ডিম কিনেছি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা ডজন। সেই ডিম মাঝে কিনলাম ১২৫ টাকা ডজন। এখনও সে ডিমের দাম বাড়তি।
শরিফুল হক নামে একজন ক্রেতা

বেড়েছে পাকিস্তানি ককের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি দরে। লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর অধিকাংশ দোকানে নেই দেশি মুরগি। যেসব দোকানে আছে ক্রেতা নেই। বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে। তবে ব্রয়লার মুরগি বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ১৫০ টাকায়।

রমজানের ঈদ থেকে ডিমের দাম বাড়তি, যা এখনও কমেনি। একই দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

শরিফুল হক নামে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের ঈদের শুরুতে ডিম কিনেছি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা ডজন। সেই ডিম মাঝে কিনলাম ১২৫ টাকা ডজন। এখনও সে ডিমের দাম বাড়তি। ১১৫ টাকা ডজন কিনতে হলো।

অন্যদিকে কেউ ন্যায্য মূল্যে আবার কেউ আগের মূল্যে বিক্রি করছেন সয়াবিন তেল।

গত ২১ জুলাই সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে এর প্রভাব নেই বাজারে।উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজারে এক দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চাওয়া হয় ৯৮০ টাকা। বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা আতিকুল ইসলাম বলেন, আগের দামে কেনা তেল এখনও দোকানে রয়েছে। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে পাশেই আরেক দোকানে তীর, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলে পাঁচ লিটার বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯১০ টাকা।