আমি স্ট্রোক করে ৪ বছর ধরে চলাচল করতে পারি না, আয়-উপার্জন করতে পারি না। মেয়েটা ক্যান্সারের রোগী এবং স্ত্রী মাজার হাড় চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, হার্টের অসুখ। আমরা তিনজনই রোগী। পরিবার আয়-উপার্জনহীন। আমাদের খুব কষ্ট। অর্থের অভাবে বাজার করতে পারিনা। অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়।

বহুদিন মাছ-মাংসের ঝোল ছুতে পারিনি, খেতে পারিনি। বনের শাক দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখি। মুড়ি ও পানি দিয়ে ইফতার করি। আমার খাদ্য চিকিৎসার খুব কষ্ট। সবকিছুরই কষ্ট। সবাই সাহায্য সহযোগিতা করুন। আমার কোনো ছেলে নেই। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে। অভাব অনটনে আমাদের খুব কষ্ট হয়।

হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ ঝুমুর আলী। সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কবুরহাট মাদরাসা পাড়ার বাসিন্দা।

ঝুমুর আলীর স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ সুফিয়া বেগম বলেন, আমরা গরীব, অসহায় ও নির্যাতিত মানুষ। ভাংগা ঘরে থাকি। আমার পরিবারের তিনজনই রোগী। আয়-উপার্জন করার মতো কেউ নেই। অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাবার জোটে না। বাজার করতে পারিনা। অনাহারে অর্ধাহারে দিন যায় আমাদের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনা, ঔষধ কিনতে পারিনা। রোজার মাসে এখনো মাছ মাংস জোটেনি। বনের শাক দিয়ে ভাত খেয়ে সেহরি, মুড়ি-পানি দিয়ে ইফতার করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা তিনজনই রোজাদার। ভালো খাবার জোটে না। টাকা কোথায় পাবো, বাজার করবো কি দিয়ে। অসুস্থ স্বামী প্রথম রোজা থেকে মাছ খেতে চাচ্ছে। কিন্তু আজও মাছের ব্যবস্থা আল্লাহ করেনি। বনের শাক দিয়ে ভাত খেয়ে বেচে আছি আমরা। আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করার লোক নেই।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে ৪ বছর ধরে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। তিনি সহ রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও মেয়ে কাকলী খাতুন। গরিব অসহায় পরিবারটি উপার্জনহীন হয়ে পড়ায়। অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় তাদের। চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এমন দুঃখ-দুর্দশার অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানিয়েছেন ঝুমুর আলী, তার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন।

এবিষয়ে বটতৈল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদিকুর রহমান (ভোটন) বলেন, বৃদ্ধ ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে চলাচল করতে পারে না। তার স্ত্রীও অসুস্থ, মেয়েটার ক্যান্সার। তারা আয়-উপার্জনহীন অবস্থায় কষ্ট করে। খুবই অসহায় দরিদ্র পরিবার। জমির বিষয়টি জানি। সমাধানের জন্য ডাকলে যাবো।

এবিষয়ে স্থানীয় এনামুল হক বলেন, ঝুমুর আলীর পরিবারের সবাই অসুস্থ। ঝুমুর আলী ও তার স্ত্রীর ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেনা। আয় উপার্জন করার মত কেউ নেই। অর্থের অভাবে খুব কষ্ট করে তারা। ঠিক মতো বাজার করতে পারেন না। চিকিৎসা করাতে পারেন না। অভাব অনটনে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রতিবেশীরা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে চলাচল করতে পারে না। তার স্ত্রীও কোমরের হাড়ে সমস্যা ঠিকমতো হাটাহাটি করতে পারেন না, হার্টের রোগে অসুস্থ। মেয়েটা ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে। তারাও গরীব। সুস্থ থাকা অবস্থায় ঝুমুর আলী অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে ও দিনমজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করতো। নিজের এক কাঠা জমির উপর মাটি ঘর ছাড়া কিছুই নেই।

তিনি আরও বলেন, অনাহারে অর্ধাহারে থাকে তারা। তারা গরীব অসহায় মানুষ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না, বাজার করতে পারে না। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এই এলাকার সবচেয়ে গরীব মানুষ তারা। সংসার চালানো ও চিকিৎসা করা পরিবারের কাছে অসাধ্য ব্যাপার। সরকার বা বিত্তবানদের কাছে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

কাকলী খাতুন বলেন, আমি ক্যান্সারের রোগী, আমার আব্বা স্ট্রোক করে ৪ বছর ধরে চলাচল করতে পারেনা এবং মায়ের মাজার হাড় চ্যাপ্টা, হার্টের অসুখ। পরিবারের সবাই অসুস্থ। আয় রোজকার করতে পারি না। অর্থের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে থাকি আমরা। কবে মাছমাংস খেয়েছি তা সঠিক মনে নেই। রোজায় একবারও মাছমাংস জোটেনি আমাদের। সেহরিতে শাক দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখি। মুড়ি পানি খেয়ে ইফতার করি। আমাদের খুব কষ্ট। আমাদের সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার কোনো ভাই নেই। আমারা তিন বোন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা শ্বশুর বাড়িতে থাকে। তারা মাঝেমধ্যে একটু সাহায্য করে। অর্থের অভাবে আমাদের সবকিছুর কষ্ট হয়। ঠিকমতো খেতে পারিনা। অসুস্থ তিনজনের কেউ-ই চিকিৎসা করাতে পারিনা, ঠিকমতো ঔষধ খেতে পারিনা। আমার ও মায়ের অপারেশন করতে বলেছে ডাক্তার। কিন্তু করাতে পারিনা। অনেক কষ্ট করে আত্মীয় স্বজন ও মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কয়েকটি কেমো নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নানান কষ্ট আমাদের। এক কাঠা জমির উপর মাটির ভাঙাচোরা ঘর আমাদের। কয়েকমাস আগে আমাদের রান্নাঘর ভেঙে দিয়েছে। রাস্তায় ও উঠানে কাটা ফেলে রেখেছে। এতে আমাদের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। খোলা আকাশের নীচে ইটের উপর পাতিল বসিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। বাথরুম ও পানির কষ্ট হচ্ছে। অথচ জমির মালিক মোহাম্মদ আলী আমাদের ওই জায়টা দিবে বলে বায়না নিয়েছিলো। পরে আমার তার জামাই সামিউলের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তার বাড়ি ভেড়ামারা উপজেলায়। তারা পথ বন্ধ করে দিয়েছে, রান্নাঘর ভেঙে দিয়েছে। কোথাও সমাধান পায়নি। আমরা সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। আমরা অসহায় ও নির্যাতিত। সবাই আমাদের সহযোগিতা করুন।

সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ ঝুমুর আলী বলেন, আমার সেজো ভাই মোহাম্মদ আলী আমাকে এক কাঠা জমি দিবে বলে বায়না নিয়েছিলো। পরে সে তার জামায়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তার বাড়ি ভেড়ামারায়। তারা আমার বাড়ির উঠানে ও পথে বরইয়ের কাঠা দিয়েছে। রান্নাঘর ভেঙে দিয়েছে। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। এসব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

ঝুমুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী যখন সুস্থ ছিলো, তখন মাঠে দিনমজুর খেটে সংসার চালাতো। স্ট্রোক করার পর থেকে চার বছর ধরে চলাচল করতে পারে না। আমার মাজার হাড় ভাংগা ও হার্টের সমস্যা, ঠিকমতো হাটতে পারিনা। মেয়েটা ক্যান্সারে আক্রান্ত। টাকার অভাবে কেউ-ই ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারিনা, ঔষধ কিনতে পারিনা। আমি তিনমাস পরপর ১ হাজার ৫০০টাকা ভাতা পায়। এই টাকায় সংসার চলে না। ঠিকমতো ঔষধ কিনতে পারিনা, বাজার করতে পারিনা। আমাদের খুব কষ্ট।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উঠানে ও পথে কাটা দেওয়া হয়েছে। রান্নাঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একটা পানির টিউবওয়েল পুতার ও পায়খানা করার জায়গা নেই। পরের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। খোলা আকাশের নীচে ইটের উপর পাতিল বসিয়ে রান্না করতে হচ্ছে৷ আমরা এসব সমস্যার সমাধান চাই। সবার সহযোগিতা চাই।

এবিষয়ে বটতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। আমার কাছে আসলে সহযোগিতা করবো।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।