পাবনা প্রতিনিধি: প্রায় দশদিন ধরে পাবনায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি ও পোল্ট্রি খামারে। টানা পাঁচদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এই পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম আর দাবদাহে মারা যাচ্ছে পোলট্রি খামারের মুরগি। কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন। দিশেহারা খামারিরা ব্যবসায় ধসের আশঙ্কা করছেন।

পোলট্রি খামারিদের ভাষ্য, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। কারণ প্রতিটি খামারের চাল টিনের। আর রোদের তাপ টিনে বেশি লাগে। যে কারণে মুরগির গরমও লাগে বেশি। এই গরমে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরমে মুরগি ছটফট করছে। স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। মুরগিকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। এতে কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার জোতগাছা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামে অনেকগুলো ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। খামারে মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা। কেউ মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করছেন, কেউবা ডিম সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে খামারের ভেতর ঠান্ডা রাখতে চলছে বৈদ্যুতিক পাখা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। মুরগিগুলো হাঁসফাঁস করছে গরমে।

মোল্লা পোলট্রি খামারের শ্রমিক আনিসুর রহমান জানান, গরম শুরুর পর থেকেই খামারে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন কয়েকবার করে মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। তাদের খামারে দুই হাজার মুরগি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৪০টি মুরগি মরে গেছে। সর্বশেষ গত শনিবার আটটি মুরগি মারা গেছে।

চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লেয়ার মুরগি খামারের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গরম শুরুর পর থেকে মুরগিকে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমেছে, আবার স্ট্রোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে।
আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, এমন তাপ থাকলি মইরে শেষ হয়ে যাবো। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। যেরমভাবে মুরগি মরতিছে, এমন গরম আরও থাকলি মুরগি টিকানো কঠিন হয়ে যাবিনি। আমারে পথে বসা লাগবিনি।

পাবনার দুবলিয়ার মুরগী ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, কয়েকদিন মুরগীর ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হয়েছি। এখন রোদে মুরগী মারা যাচ্ছে। তাই মাইকিং করে কম দামে বিক্রি করতেছি। এই রোদে আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, প্রচণ্ড গরম থেকে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ হচ্ছে। এছাড়া খামার ঘরের টিনের চালে চটের বস্তা বিছিয়ে পানি ঢালা, মুরগির শরীরে পানি ছিটানো এবং মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি দিতে বলা হচ্ছে। দুপুরে অতিরিক্ত গরমের সময় খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, জেলায় তালিকাভুক্ত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৯৭৮টি, এই তালিকার বাইরে প্রায় ৫০০ খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির তালিকাভুক্ত খামার রয়েছে এক হাজার ১৩০টি। এসব খামারে মুরগি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ। তবে প্রচণ্ড গরমে জেলা এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এদিকে, ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল থেকে পাবনা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে।