ঢাকা: করোনার মধ্যে চাকরিচ্যুত দেশের গণমাধ্যম কর্মীরা কেমন আছেন? তাদের খোঁজ নেয়ার কেউ কি আছেন? কেনো এমন অমানবিক আমরা? দেশের গণমাধ্যমের কেনো এই শোচনীয় অবস্থা! করোনার কারণে দেশের এই সংকাটপন্ন সময়ে যখন পরিবারের খাদ্যের যোগান দেয়াই দায় তখনই কিনা তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়!

এইতো সেদিন এক গণমাধ্যম কর্মী চক্ষু লজ্জায় আড়ালে কল করে বলছিলেন ‘ভাই কোথাও কি ত্রাণ আছে? আমার একটু ব্যবস্থা করে দিন, খুবই খারাপ অবস্থায় দিন যাচ্ছে।’ শুধু কি তাই! গত (২৪ মে) বকেয়া বেতন চাওয়ায় ঈদের দিন ৬ সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছিলো আগামী নিউজের সম্পাদক ডা. নীম হাকিম। চাকরি হারানো সংবাদিকরা কি করছেন? কেমন করেই বা দিন কাটাচ্ছেন? গণমাধ্যম কর্মীদের মানবেতর জীবন নিয়ে যেন কথা বলার কেউ নেই!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করোনায় চাকরি হারানো এক সাংবাদিক বাংলাদেশের সময়.কমকে বলেন, আমাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা অমানবিক। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টের জীবন পার করছি। যদিও ডিই্উজের সাংবাদিক নেতাদের কারণে আমরা আমাদের বকেয়া পেয়েছি কিন্তু চাকরি আর পাওয়া হয়নি। হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হলে তিন মাসের বেতন অগ্রীম প্রদান করার যে নিয়ম রয়েছে তাও পালন করেনি মালিক পক্ষ।

চাকরিতে পুর্নবহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাই এখন দায়। মানুষের কাছে এখন হাত পাতা ছাড়া উপায় নেই। তাই করোনায় চাকরি হারানো সাংবাদিকদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের কাছে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের অন্যায় না থাকলে চাকরিতে পুর্নবহাল করার দাবি জানাচ্ছি।

দেশ রুপান্তরের সাংবাদিক রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে সংবাদকর্মী ছাঁটাই নতুন কিছু নয়। মালিক পক্ষের স্বার্থ হাসিল হলেই তারা এমন নগ্ন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও দেশে সংবাদকর্মী ছাঁটাই বন্ধ হয়নি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। গত দু’মাসে শতাধিক সংবাদকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। বেতন বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। চলমান সঙ্কটে সংবাদকর্মীদের ছাঁটাইয়ের মতো নিন্দনীয় কাজ আর কিছুই হতে পারে না।

তিনি বাংলাদেশের সময়. কমকে আরো বলেন, এসব গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছেন। বেতন না হলেও করোনার ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। গণমাধ্যমের মালিকদের রাজৈনতিক পরিচয়ের কারণে এ সংকট দিনে দিনে বাড়ছে। এরা মিডিয়াকে নিজেদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। যতোক্ষণ তাদের প্রয়োজন ততোক্ষণ এখানে বিনিয়োগ করবেন। স্বার্থ হাসিল হলে চাকরিচ্যুত করে যেনতেনো ভাবে প্রতিষ্ঠান চালু রাখছেন।

যারা বিভিন্ন পরিচয়ে মিডিয়ার লাইসেন্স নিয়ে এসব করছেন তারা কোনোভাবেই জবাবদিহীতার ঊর্ধ্বে নয়। তাই গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং জবাবদিহীতার আওতায় আনতে হবে। সংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা সংগঠনগুলোকে ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে সহকর্মীদের রুটি-রুজির স্বার্থ দেখতে হবে। তা না হলে এই সংকট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।

এ বিষয়ে ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান বাংলাদেশের সময়.কমকে বলেন, করোনায় দুর্যোগের সময়ে কাউকে চাকরিচ্যুত না করার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে বর্তমান সংকটকালে সংবাদকর্মী ছাঁটাই করে মালিক পক্ষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করছেন না। করোনার মুহূর্তে মালিক পক্ষের চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত অমানবিক । এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, চলমান মহামারিতে সংবাদকর্মী ছাঁটায়ের করার বিষয়ে তথ্য মনন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশের সময়/টিএম