মুহাম্মদ নাঈম: ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে গাড়ি প্রবেশের তিনটি পথ তা হলো- সায়দাবাদ,বাবুবাজার,এবং পোস্তগোলা। আর লঞ্চের চলাচলের পথ হলো একটি সেটি সদরঘাট। প্রতিদিন এই পথে হাজার মানুষের আগমন হয় ঢাকাতে। আর সকল গাড়ি আগমন এবং বহির গমন এ্কই পথে।

ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে গাড়ি এসে গোলাপসার মাজার এসে ভিড় করে। গাড়িগুলিকে এখানে থামতে দেয়া হলে যানজট কমানো সম্ভব হবে না। একই গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে যতদিন পর্যন্ত হকার উচ্ছেদ ও পরিবহনে শৃঙ্খলা না আনা হবে, ততদিন যানজট মুক্ত হবে না এটি চ্যালেঞ্চ করে বলতে পারি বলে মন্তব্য করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন। বাংলাদেশের সময় ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, যেহেতু গুলিস্তান একটি কমার্শিয়াল এরিয়া তাই ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থাকা সত্তেও রাস্তায় টার্মিনাল বানিয়ে রেখেছে কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি। ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে গাড়ি এসে গোলাপসার মাজার এসে ভিড় করে করতে দেয়া যাবে না। গাড়িগুলিকে এখানে থামতে দেয়া হলে যানজট কমানো সম্ভব হবে না।


প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে, যারা পরিবহনে শৃঙ্খলা মানবে না তাদেরকে নির্দিষ্ট একটি সময় সাজার ব্যাবস্থা করুন। দেখবেন সাজার ভয়ে পরিবহনে শৃঙ্খলা তারা মানতে বাধ্য হবে।

তিনি আরো বলেন, তার পর যে সমস্যা সেটা হলো, ফুটপাত গুলো হকারদের দখলে। তারা এমন ভাবে ফুটপাত দখল করেছে যে, কোনো মানুষ সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারে না। ফুটপাত দখল করেই তারা থামেনি রাস্তাও দখল করে রেখেছে। যেহেতু গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট সেহেতু আগমনি গাড়ি বহির গমন করতে পারছে না ফলে যানজট বেড়েই চলছে।

কাউন্সিলর রতন বলেন, যে সকলব্যাক্তিরা ঢাকায় আসে কাজ শেষ করে চলে যাবে কিন্তু তারা এই যানজট ফাদে পড়ে বসে কারণে পরিবহনে শৃঙ্খলা না থাকায় তাদের সময়মত কাজও শেষ হয় না। আর তারা বাধ্য হয়ে ঢাকাতে থাকতে হয়। এ্কঘন্টার রাস্তা যেতে ৫-৬ঘন্টা লাগে এই যান জটের কারণে। আর ফেরার সময় এমন হয় যে, বাড়ি ফিরতে কারো কারো ১০-১২ ঘন্টা সময়ও লেগে যায়। এতে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। আমি বিশ্বাস করি পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলে আর এই ভোগান্তির পোহাতে হবে না জনসাধারণের।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যখন হকার উচ্ছেদ করে আসি দেখা যায় তার কিছুক্ষণ পরে আবার হকাররা সেখানে বসছে। যদি লোকাল থানার পুলিশ নজর রাখতো এবং মনিটরিং করতো তাহলে তারা এখানে বসতেও পারতো না। তখন রাস্তা ফাকা থাকতো আর যানজটও কম হতো।

তিনি বলেন, গুলিস্তান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় হকারদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের পূণর্বাসন করে দিলে তারা আর রাস্তা দখল করে হকারি করবে না। এর ফলে যানজট মুক্ত রাজধানী দেখতে পাবো।জনসাধারণের আর ভোগান্তির পোহাতে হবে না।

তিনি আরো বলেন, আমি অনেক হকারের ব্যাপারে জানি, যাদের ছেলে-মেয়েরা ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল এবং বিভিন্ন কলেজে পড়া-লেখা করে। তারা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তারা বলেছেন, সরকার আমাদের পূণর্বাসন করলে আমরা আর ফুটপাট/রাস্তা দখল করে হকারি করবো না।

রতন বলেন,বর্তমানে গুলিস্তানের হকার উচ্ছেদ করা এই শহরের ফরজ কাজের মধ্যে অন্যতম একটি। আবার তাদের পরিবারের দিক বিবেচনা করেও পূণর্বাসন করা আমাদের কর্তব্য। মাত্র আড়াই হাজার হকারদের পূণর্বাসন করা কোনো কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজনে নতুন তালিকা করে হকারদের পূণর্বাসন করা হোক।

তিনি বলেন,যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা করো ক্ষতি করে কোনো কিছু করেন না, সেহেতু তার দৃষ্টি যেন বিষয়টি পড়ে এবং দ্রুত হকারদের পূণর্বাসন করা হয় এই দাবিই করছি। একই সাথে পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে হবে। নিয়ম মেনে গাড়ি চলাচলে বাধ্য করতে হবে। তাহলেই যানজট নিরসন হবে।

তিনি আরো বলেন,পুলিশ প্রশাসন যদি আন্তরিক হয় তাহলে দশ মিনিটে রাজধানী যানজট মুক্ত করতে পারে। তাদের সদিচ্ছা থাকলে পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে পারে, হকার উচ্ছেদ করা এটা তেমন কোনো কাজ নয়। শুধু তাদের সইচ্ছা থাকলেই বেঁচে যাবে প্রতিদিন মানুষের কর্মঘন্টা।

রতন বলেন,যানজট এর জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরাও তাদের অনেক সময় নষ্ট করে রাস্তায়। তারা অলস সময় পার করে জ্যামে বসে। পরিবহনে শৃঙ্খলা যতদিন আনা হবে না ঠিক ততদিন রাজধানীর যানজট কমবে না। আর আমাদের শিক্ষার্থীরাও তাদের মূল্যবান সময় রাস্তায় নষ্ট করবে।

তিনি বলেন, আমি গত বছর এই সমস্যার(পরিবহনে শৃঙ্খলা ও হকার উচ্ছেদ) কথা বলেছিলাম, তখন পুলিশ খুব আন্তরিক ছিলো। তারা আমার কথাটি প্রাধান্য দিয়েছিলো পরিবহনে শৃঙ্খলা ও হকার উচ্ছেদ দুটিই করেছিলো। যার ফলে তখন থেকে রাজধানীতে ৪ মাস যামজট ছিলো না। এজন্য মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। আমার কথা রেকর্ড করা আছে সিটি করর্পোরেশনে।

২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সেগুনবাগিচার থেকে নগর ভবনে যেতে-আসতে সময় লেগেছে ৯০ মিনিট। ২০১৯ সালের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি হকার উচ্ছেদ করার পরে আমার সেগুনবাগিচার থেকে নগর ভবনে যেতে-আসতে সময় লাগছে মাত্র ১৪ মিনিট। এজন্য মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্তিতিতে আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জনাই। আমি বিশ্বাস করি এবং প্রমাণও পেয়েছি, পুলিশ আন্তরিক হলে নিয়ম ফেরানো কোনো কঠিন কিছু নয়।