করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জীবন রক্ষায় ডেক্সামেথাসন নামের একটি সহজলভ্য ওষুধ কার্যকর বলে দাবি করেছেন রোগ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, সিরিয়াস রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন ভালো ফল দেয়। করোনায় যাদের অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর প্রয়োজন তারাই শুধু এই ওষুধ ব্যবহার করবেন। সাধারণ করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধ প্রযোজ্য নয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, শতকরা ৮০ ভাগ করোনা রোগী বিনা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। এটা ব্র্যাকথ্রো ট্রিটমেন্ট। এটা আমরা অন্য রোগে ব্যবহার করতাম। কিন্তু করোনায় যে এটা ব্যবহার হয় তা আগে জানতাম না। ডেক্সামেথাসন শিগগিরই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা উচিত। বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী বলেন, আরও সাত-আটটি দেশ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে ডেক্সামেথাসন ভ্যাকসিন ইংল্যান্ডে ৪২ হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। এতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রাজিল, ভারত, জাপানও করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। অক্সফোর্ডের তৈরি করা ভ্যাকসিন ভারত কিনে নিয়েছে। তারা এখন পরীক্ষামূলক ব্যবহারও করছে। এগুলোই এখন করোনার জন্য অ্যাডভান্স চিকিৎসা। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন ভালো উদ্যোগ। এটা কার্যকর হলে ভালো হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগানো উচিত। জেলা বা সারা দেশে লকডাউন কার্যকর হয়নি। এখন সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে ভালো ফল বয়ে আনবে। যেখানে রোগ ছড়াচ্ছে সেখানেই লকডাউন দেওয়া উচিত। পুরো জেলা ও দেশ দিয়ে লাভ হয় না। এটা কার্যকর হয় না। প্রতিটি লকডাউন কমপক্ষে দুই সপ্তাহ রাখতে হবে। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বস্থাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় সামাজিক দূরত্ব মানতে দুই মিটার অর্থাৎ অন্তত ছয়ফুট দূরত্ব সবাইকে মানতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ পাকিস্তান এটাকে তিন ফুট হিসেবে ব্যবহার করছে। আমার মতে, সামাজিক দূরত্ব অন্তত ছয় ফুট হওয়া উচিত। এতে কেউ হাঁচি-কাশি দিলেও কোনো সমস্যা হবে না। বিশিষ্ট এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, আগামী ছয় মাস সবারই অবশ্যই বাধ্যতামূলক ভালো মাক্স ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে দুটি মাক্স ব্যবহার করা জরুরি বলে আমি মনে করি। চোখ দিয়েও করোনা প্রবেশ করতে পারে। এজন্য এক ধরনের চশমা বেরিয়েছে, তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া হাত ও পায়ে মোজা হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাতলা সিল্কের মতো কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর হার শতকরা ১.৩৪ ভাগ। এটা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় কম। এটা একটা ভালো দিক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ভিটামিন সি ও ডি’র উপস্থিতি আছে বেশি। তাই আমাদের দেশে আক্রান্ত হওয়ার পরও তুলনামূলক কম রোগী মারা যায়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন