পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত ভেসে আসছে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশ। মৃত এসব জেলিফিশের পচা দুর্গন্ধে নাকাল সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয়রা। সাগরে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন জেলেরা। তবে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে সাগরের এই জেলিফিশের আধিক্য কমার কথা বলছেন গবেষকরা।
পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, জেলিফিশগুলোর পচাঁ দুর্গন্ধে সৈকতে আসা যায় না। দু’দিন হলো পরিবার নিয়ে এসে অন্যান্য স্পট ঘুরেছি। কিন্তু সৈকতে পরিবার নামতে চাচ্ছে না। এগুলো পরিষ্কার না করলে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, অপরদিকে পর্যটকেরা ভোগান্তির শিকার হবে।
ঢাকা থেকে আসা আরেক পর্যটক সোমলতা বিশ্বাস বলেন, অনেকবার কুয়াকাটা এসেছি এমন বিশ্রী পরিবেশ কখনো দেখিনি। হাঁটতে গেলেই পায়ে লাগে, গা ঘিনঘিন করে। দুর্গন্ধ তো আছেই। দ্রুত এগুলো পরিষ্কারের দাবি করেন তিনি।

এদিকে সৈকত সংগ্লগ্ন জেলে সোবাহান বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে জেলিফিশের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। জাল মারলে মাছ উঠে না, ওঠে জাল ভর্তি জেলিফিশ। আমাগো ভাষায় এইয়ারে কয় নোনা কই। এই নোনা গায়ে লাগলে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগ হয়। তাই আমরা মাছ ধরা বন্ধ রেখছি। নোনা কোমলে মাছ ধরতে নামমু।’

সৈকত পাড়ের ব্যাবসায়ী মোজম্মেল হোসেন বলেন, রোজার ঈদের বেশি দিন বাকি নাই। পর্যটক আসা শুরু করবে তার আগেই যদি জেলিফিসের পঁচা এই দুর্গন্ধ না যায় তাহলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। রোজার এই একমাস বইয়া বইয়া চালান খাইছি। সকলের কাছে অনুরোধ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করেন।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু জানান, গত বছরও সৈকতে মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। তবে এ বছর গত বছরের থেকে সংখ্যা অনেক বেশি। এগুলো এখন পঁচতে শুরু করেছে। প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বর্তমানে সাগর পাড়ে জেলিফিশের দুর্গন্ধে নাকাল পর্যটক ও স্থানীয়রা।

কলাপাড়া ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিস অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, জেলিফিশ তীরে ভেসে আসার বিষয়টি পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। সমুদ্রে সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার জেলিফিশ। সমুদ্রে কচ্ছপসহ জেলিফিস খেকো প্রাণির সংখ্যা কমে যাওয়া কিংবা সাগরের গভীরে অক্সিজেন হ্রাসের সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জেলিফিশের সংখ্যা বাড়তে পারে। এ ছাড়া সাগরে জেলিফিস বাড়ার আরও অন্যান্য কারণও থাকতে পারে যা অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তীরে আসা জেলিফিশের পরিমাণ কমতে পারে।