বিভিন্ন ফল কিংবা সবজির উপর ছুরি কাচির সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয় কারুকার্য। এ কারুকার্যের নাম ফুড কার্ভিং। বিভিন্ন অনুষ্ঠান শোভাবর্ধন হিসেবে এই শিল্পটির জুড়ি মেলা ভার। দেশে হাতে গোনা যে কয়জন ফুড কার্ভিং আর্টিস্ট রয়েছেন এদের মধ্যে একজন শরীয়তপুরের যুবক ফারদিন খান।

এই সুন্দর ফুড কার্ভিং করে তিনি ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন বাংলাদেশ জুড়ে। শুধু কি তাই? ভিন্নধর্মী এ পেশা থেকে তার মাসিক আয় এখন লাখ টাকা।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফুড কার্ভিং আর্টিস্ট ফারদিন খানের বাড়ি সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের আটিপাড়া এলাকায়। তার বাবা আব্দুর রব খান আর মা আফরোজা খানম। পড়াশোনা করছেন শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষে।

ছোটবেলা থেকে ফারদিন ছবি আঁকা ভীষণ পছন্দ করতেন। আর এসব ছবি আঁকাকে ভিন্ন রূপ দিতে বাজার থেকে কিনে আনা বিভিন্ন সবজির উপর খোদাই শুরু করে। এসব দেখে ভীষণ রাগ করতেন বাবা রব খান। তবে ফারদিন সবার অগোচরেই লুকিয়ে লুকিয়ে চালিয়ে যেতেন তার এই শিল্পকর্ম। এসময় তার এ শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহ দেখে বড় দুই বোন আর মা তাকে উৎসাহ দিতে থাকে।

২০১৭ সালে জুন মাসে তার এক বোনের বিয়েতে সুন্দর একটি ফুড কার্ভিং করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। তার এই কাজে মুগ্ধ হয়ে এরপর সবাই তাকে আরো বেশি উৎসাহ জোগায়। এরপর ২০১৮ সালে একটি ফেসবুক পেইজ খুলে সেখানে তার বিভিন্ন ফুড কার্ভিংয়ের ভিডিও আপলোড দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তার অর্ডার আসা শুরু করে।

এ থেকেই রীতিমতো রোজগার হওয়া শুরু হয় তার। বর্তমানে এই ফুড কার্ভিং থেকে তার প্রতিমাসে আয় এখন লাখ টাকা উপরে।

জানতে চাইলে ফারদিন বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকা পছন্দ। কিন্তু আমার পরিবার এসব পছন্দ করতেন না। একটা সময় আমার সব রঙ পেন্সিল ফেলে দেয়া হতো। এরপরে আমি বাসায় যেসব সবজি কিনে আনা হতো সেসব লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে তার উপরে নকশা করা শুরু করি।

আমাদের সমাজে এই ফুড কার্ভিংকে বলা হয় মেয়েদের কাজ। তাই অনেক বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সকল বাঁধা বিপত্তি পার করে এখন আমি বাংলাদেশের একজন সফল ফুড কার্ভিং আর্টিস্ট। আমার এখন প্রতিমাসে ১ থেকে ৫ লাখ টাকাও আয় করি। আমার বাবা এখন আমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করে।

ফারদিনের এই ফুড কার্ভিংয়ের কাজকে একসময় ভীষণভাবে অপছন্দ করলেও এখন ছেলের কাজ নিয়ে গর্ব করে বাবা আব্দুর রব খান বলেন, ছোটবেলা ফারদিন যখন এসব কাটাকুটির কাজ করতো আমি ভীষণ রাগারাগি করতাম। তবে ও এসব শুনতো না। এখন বুঝতে পারি এটিও একটি শিল্প। ও এখন বিভিন্ন জেলায় গিয়ে একাজ করে। আমরাও চাই এই শিল্প নিয়ে ও উন্নতি করুক।

ফারদিনের মা আফরোজা খানম বলেন, ফারদিন ছোট বেলা থেকে আমার সাথে রান্নাঘরে গিয়ে সবজি কাটাকাটি করতো। পেয়ারা বা আপেল খেতে দিলে সেটা না খেয়ে সুন্দর সুন্দর ডিজাইন বানাতো।

প্রথম প্রথম আমি রাগ করতাম। কিন্তু ও আমার কথা শুনতো না। যদিও পরে আমি এটি মেনে নেই। ও এখন এই শিল্প নিয়ে অনেক দূরে পৌঁছে গেছে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি।