নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্টিল মিলে লোহা গলানোর পাত্র (ভাট্টি) বিস্ফোরণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চার শ্রমিক। আহতদের মধ্যে দগ্ধ তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বরপা এলাকার প্রিমিয়ার স্টিল এন্ড রি-রোলিং মিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সময় টিভি

নিহতরা হলেন- ফাহিম (২৫) ও মিজানুর রহমান (৩৩)। দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবু সিদ্দিক (৩০), রাজু (৪০), শাকিল (২০), রফিক (৪৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল হাসান সময় নিউজকে বলেন, প্রিমিয়ার স্টিল মিলে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে লোহা গলানোর পাত্র বিস্ফোরিত হলে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই একজন শ্রমিক মারা যান। দগ্ধ পাঁচ শ্রমিককে চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে আরো একজন মারা যান। চিকিৎসাধীন অন্য দগ্ধ শ্রমিকদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে দগ্ধ অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তদের মধ্যে ফাহিম ও মিজানুর রহমান নামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফাহিমের দেহের ৯০ শতাংশ এবং মিজানুর রহমানের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া শাকিলের ১০০ শতাংশ, আবু সিদ্দিকের ১০০ শতাংশ ও রফিকের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের সকলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সময় নিউজকে জানান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে তিনজনকে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ফাহিম ও মিজানুর নামে দুইজন মারা গেছেন। এছাড়া শরীরে ১০০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থা নিয়ে শাকিল ও আবু সিদ্দিক ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। আরও দুইজনকে হাসপাতালে আনা হলেও স্বজনরা তাদের নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে গেছেন।

এদিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের নার্সিং ইনচার্জ মো. আহসান হাবিব জানান, পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিল। হাসপাতালের আইসিইউ’র বিছানা খালি না থাকায় দুইজনকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

দগ্ধ রাজুর ভাই মো. সাজুও একই কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, রাতে কাজ করার সময় লোহা গলানোর ভাট্টিতে বিস্ফোরণ হয়। গলিত লোহা ছিটকে কয়েকজনের শরীরে পড়ে। পরনে সেফটি জ্যাকেট না থাকায় গুরুতর দগ্ধ হন ছয়জন। ঘটনাস্থলেই চুয়াডাঙ্গা জেলার একই থানার আলোদিয়ার বাজার এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান মারা যান। বাকিদের ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ফাহিম নামে আরো এক শ্রমিক মারা যান।

প্রিমিয়ার স্টিল মিলে কাজ করছিলেন আলমগীর নামে এক শ্রমিক। বিস্ফোরণের পর গলিত লোহা ছিটকে আসলে দগ্ধ হয় তার ভাতিজা শাকিল।

আলমগীর বলেন, পায়ে বুট আর হাতে গ্লাভস থাকলেও তাদের পরনে কোনো ধরনের সেফটি জ্যাকেট ছিল না। সেফটি জ্যাকেট ছাড়াই সাধারণ পোশাক পরে কাজ করেন তারা। নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করায় এই দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা হতাহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার জন্য কারখানা মালিক পক্ষকেই দায়ী করছেন হতাহতদের স্বজনরা।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল হাসান সময় নিউজকে বলেন, বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে আমরা তদন্ত করছি। মালিকপক্ষের কোন অবহেলা বা গাফিলতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্বজনরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা দূর দূরান্ত জেলায় থাকেন। থানায় এসে অভিযোগ দিলে আমরা মামলা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।