নরসিংদী জেলায় বেগুন চাষিরা উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় চরম হতাশায় ব্যাপক লোকসানের মুখে মাথায় হাত পড়েছে তাদের। এছাড়া চলতি মৌসুমে বেগুনে খেতে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার সার কৃষি উপকরণ দাম বৃদ্ধিতে খরচ বেড়েছে বেশ। বরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে লোকসানের ভাগ বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

চাষিদের দাবি, খরচই তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে তারা জানান, সফল ফলিয়ে খরচের টাকা উঠানো ত দূরের কথা বাজারে যে পরিমাণ বেগুন নিয়ে যাই, তা বিক্রি করে শ্রমীক গাড়ি ভাড়াও জোগাড় করতে কষ্ট সাধ্য। এমন অবস্থায় আগামী বছর আর বেগুন চাষ না করার কথাও জানান অনেকে।

আজ বুধবার দুপুরে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় হাটে বিক্রির জন্য আনা জমি থেকে বেগুন উঠিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে আসতেই চলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি। চাষিরা পাইকারদের সঙ্গে দর দামে হলেই বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরছেন বাড়ি।

স্থানীয় কয়েকজন চাষিরা জানান, নরসিংদী জেলা সবজির ভান্ডার খ্যাত জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ এলাকা। ধান বাদ দিয়ে লাভের আশায় সবজির ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় ভাল ফলনে সবজিসহ বেগুন চাষ করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় লোকসানে হতাশ বেগুন চাষিরা।

কথা কৃষক মোমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে লম্বা বেগুন চাষ করে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। গাছে ফলন ভালো হয়েছে। রমজানের শুরুতে ভালো দামে ভালো মুনাফার আশায় ছিলাম। তবে বাজার দৌরাত্ম্যের কারণে দাম না পেয়ে হতাশ। বাজারে ভালো বেগুন মন প্রতি ৪-৫ শ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি না। মাত্র ৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’

চাষি মরম আলী জমি থেকে বেগুন উঠিয়ে রাস্তার পাশে উজন করছন। তিনি বলেন, ৩০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতদিনে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। শ্রমিক, সার, বীজসহ যেসব খরচ হয়েছে, বেগুন বিক্রি করে তার অর্ধেক খরচও আসবে না। আগামীতে আর বেগুন করবো না।’ এই বলে একপর্যায়ে হাত থেকে বেগুন ছুড়ে ফেলেন তিনি।

কৃষকের স্ত্রী মরজিনা আক্তার বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নিয়মিত কাজ করেছি। সার কীটনাশকসহ সব কিছুর দাম বেশিতে বেগুনের দাম কম থাকায় শ্রম খরচ উঠাতেই হিমশিম খাব। বেগুন আর করবো না।

পাইকারি ক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, আমার সাথে ৬-৮ জন মিলে ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়ে এই ব্যবসাটা করি। প্রতিদিন এখান থেকে কয়েক হাজার বেগুন কৃষকদের কাছ থেকে কিনে জাত করে ট্রাকে ভরে কুমিল্লা এলাকায় আরোতে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়।

পাইকারি ক্রেতা মো মোখলেস বলেন,সবজির জন্য বিখ্যাত। এখানকার সবজি এর চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হত। ইমা কোম্পানি বিভিন্ন দেশে সবজি সাপ্লাইয়ার ব্যবসায়ী ছিলাম। করোনার পরে ১০ লাখ টাকা লসের পর ওই ব্যবসা বন্ধ। এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে বিভিন্ন আড়ঁতে সবজি পাঠাই এই নিয়ে নিয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। এখন যে সবজির বাজার কম এর জন্য মূলত কারন পরিবহন শুল্ক বৃদ্ধিতে বিদেশে রপ্তানি কমে গেছে। সরকার যদি রপ্তানিতে শুল্ক কমিয়ে বিদেশি বাজার ধরতে পারে তাহলেই চাষিরা ন্যয্য দাম পাবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর রমজান উপলক্ষ্য কৃষকরা বেগুন চাষে একটু বেশি আগ্রহী হয়। এ বছর রমজানের শুরুতে দান ভালো পেয়েছিল। উন্নত বীজ ও কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগের তুলনায় বেশি ফলন পাচ্ছে কৃষকরা। বর্তমান দামে অনেক চাষিরা হতাশ। আশা করি সামনে দাম কিছুটা বারলে লাভবান হবে।