ঠাকুরগাঁওয়ের সড়কে নিয়ম না মানায় মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে হরহামেশা মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে ট্রাফিক পুলিশের মামলার বেশিরভাগই হচ্ছে নিরীহ ও দুর্বলদের বিরুদ্ধে। যারা প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। সব আইন যেন দুর্বলদের জন্য। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ট্রাফিক পুলিশকে হেয় করার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র সঠিক না থাকলে, ট্রাফিক আইন না মানলেই পুলিশ মামলা দিচ্ছে।

অন্যদিকে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষুধ কিনতে মোটরসাইকেল নিয়ে দোকানে যাওয়ার পথে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টের মুখে পড়েন এক মোটরসাইকেল আরোহী। এসময় হাত পা ধরে মাফ চাইলেও ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে তাকে। ২৫ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।

পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক সংবাদিকদের জানান, ওই যুবক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। সে ওষুধ কেনার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। পুলিশকে হেয় করার জন্যই ভিডিও করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে দাবি এসপির।

জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ যেন মোটরসাইকেল চালকদের মামলা দিতেই বেশি দেখা যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শহরজুড়ে অনেক গাড়ি আছে যার কোন লাইসেন্স নেই, ফিটনেস নেই, মূল সড়কে। পার্কিং করে রাখে। খোদ ট্রাফিক পুলিশ ফাড়ির সামনেই সারিসারি করে অবৈধভাবে গাড়ি রাখা হয়। সেদিকে তাদের কোন নজর নেই। যানজট নিরসনে নয়, মামলা দিতেই ব্যস্ত থাকেন তারা।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক নেমে পড়ে সড়কে। এ সব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে চালকরা বলছে, এ সব হলো অতিরিক্ত মামলা।

শহরের চৌরাস্তায় দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মোটরসাইকেল আরোহীদের আটক করে গাড়ির যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই করছেন। এসময় ইট ও খোয়া বোঝাই দুইটি পাওয়ার টিলার হঠাৎ মাঝ রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়া গাড়ি দুটিকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে দেওয়ায় পথচারীদের তোপের মুখে পড়েন সার্জেন্ট। পরে তাদের আটক করা হয়।

মোটরবাইকেল চালক রনি জানান, গাড়ির কাগজটা সঙ্গে না থাকায় ১৫ হাজার টাকার মামলা দিয়ে ছিলো ট্রাফিক পুলিশ। পরে কাগজপত্র দেখিয়েও কাজ হয়নি। এটা রীতিমত বাড়াবাড়ি। যেনো বাইক একটি অবৈধ যানবাহন। রাস্তায় উঠলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চালাতে হবে।

সাগর নামে একজন জানান, আজ পর্যন্ত একটা বাস, ট্রাক, নসিমন, পাওয়ার টিলারকে আটক করতে দেখাম না। যত আইন প্রায়োগ ট্রাফিকের শুধু বাইকারদের ওপর। চৌরাস্তা ও রোডে অটোরিক্সা রাস্তা বন্ধ করে লোক ওঠানোর জন্য দাড়ায়। এর জন্য প্রতিদিন জ্যাম লেগেই থাকে। সেগুলো ট্রাফিক পুলিশ দেখে না। দেখে কোন দিক দিয়ে একটা বাইক যায়। অবৈধ ভাবে নসিমন, করিমন পাওয়ার টিলার সহ অনেক যানবাহন চলাচল করে চৌরাস্তা দিয়ে সেগুলো দেখেও না। আইন প্রয়োগ করেন ভাল কথা কিন্তু সবার জন্য সমানভাবে করুন। কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আরেক চালক বলেন, জরুরি কোনো কাজে গেলে পুলিশ বার বার রাস্তায় থামিয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখে। অনেক সময় ট্রাফিক জোর করে মামলা দিয়ে বলে ছোট একটি মামলা দিয়েছি।

অন্য আরেক চালক বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে, ফিটনেস বিহীন, দুর্বল গাড়িগুলো রাস্তায় গেলেও ট্রাফিক পুলিশ তাদের দেখে না। তারা আমাদের মতো শ্রমিক, দিন মজুর এবং দুর্বলদের বেশি মামলা দিচ্ছে। প্রভাবশালীদের নয় দুর্বলদের বেশি মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ।

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. মাসুদ হাসান বলেন, আইন সবার জন্য সমান, চালকরা অন্যায় বা অনিয়ম করলে আমরা মামলা দিয়ে থাকি।রাস্তায় অনিয়ম করলে মামলা দেওয়া হয়। কোনো গাড়িকে টার্গেট করে মামলা দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয় তা পুরোটাই ছিল সাজানো। সেই ব্যক্তি তার মায়ের ব্যবস্থাপত্র দেখাতেও ব্যর্থ হন বলে দাবি জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তার। যে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে তা অংশ বিশেষ বলেও দাবি করেন তিনি। যা প্রকৃতপক্ষে উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত।

তিনি আরও বলেন, পুলিশকে হেয় করার জন্য এই প্রচারণটা চলেই আসছে। পুলিশ ইচ্ছা করে মামলা দেয় না। চালকরা অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।