মিসর সীমান্ত সংলগ্ন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা। এটি তথাকথিত নিরাপদ একটি এলাকা। কিন্তু সেখানেই আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খালি হাতেই স্বজনদের খুঁজছে সেখানকার মানুষ।

একটি ছোট শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন উদ্ধারকর্মী। তার মুখ পুড়ে গেছে ও পিঠে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। এর আগে একজন নারীকে হাসপাতালের বাইরে তার সন্তানকে খুঁজতে দেখা যায়। পুরো শহরেই এখানে-সেখানে ভবনের স্তূপের নিচে লোকজন চাপা পড়ে আছেন। অনেককেই এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ইসরাইলের হামলায় গাজায় এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজারের বেশিই শিশু। অপরদিকে ইসরাইলে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। গাজার চলমান সংঘাতে বিরতি দেওয়ার জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এর আগে জানিয়েছেন যে, মার্কিন ও ইসরাইলি নেতারা সোমবার নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের সময় মানবিক কারণে গাজায় ইসরাইলের হামলায় কৌশলগত বিরতি এবং জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনকে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি তিন দিনের বিরতির পরামর্শ দিয়েছেন কি না? কিন্তু তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, তাদের সেনারা এখন গাজার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, ইসরাইলি সৈন্যরা স্থল, বিমান এবং সমুদ্রপথে একসঙ্গে হামলা চালিয়েছে। এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও দাবি করেছিলেন যে, তাদের সেনারা গাজা সিটির ভেতরে অভিযান চালাচ্ছে। খবর আলজাজিরার।

লোকজনকে দক্ষিণদিকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাসের গোয়েন্দা ও অস্ত্র বিভাগের প্রধানকে হত্যা করেছে। এক বিবৃতিতে মোহসেন আবু জিনা নামে হামাসের এই শীর্ষ নেতাকে হত্যার দাবি করেছে আইডিএফ। কৌশলগত গোলাবারুদ এবং রকেট উৎপাদনের শীর্ষ নেতা বলে তাকে অভিহিত করা হয়েছে।

ইসরাইলের হামলায় ৪২ স্বজনসহ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। একই হামলায় তার আরও ৪২ জন স্বজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা খবরটি নিশ্চিত করেছে। নিহত সাংবাদিকের নাম মোহাম্মদ আবু হাসিরা। তিনি ওয়াফাতে কাজ করতেন।

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বলেছে, যখন থেকে তারা সাংবাদিক মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গত মাসটি ছিল সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী।

১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বে সাংবাদিক মৃত্যুর সংখ্যা নথিভুক্ত করছে সিপিজে। সিপিজের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর কমপক্ষে ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ জন ফিলিস্তিনি, চারজন ইসরাইলি এবং একজন লেবাননের নাগরিক। সিপিজে বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের সবাই তাদের মৃত্যুর সময় সংঘাতের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন কি না তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।

সূত্র : আলজাজিরা/বিবিসি