নরসিংদীর রায়পুরার যুবক গবেষক, সাহিত্যিক, সংগ্রাহক ফকরুল হাসান। ৩৬ বছর আগে উপহারের জমানো টাকায় নেশায় শুরু করেন সংগ্রহ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি দেশসহ বিশ্বের ১৩০টির অধিক দেশের কাগজি মুদ্রা, কয়েন, স্মারক, ডাক টিকেট তামা-কাঁশাসহ নানান পুরনো জিনিসপত্রে সঞ্চিত সংগ্রহে গড়েছেন মিনি মিউজিয়াম। নাম দিয়েছেন সংগ্রহশালা।

উপজেলার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর অজপাড়াগাঁয়ে তার দৃষ্টি নন্দন বাড়িতেই দু’তলা ভবনে সংগ্রহশালাটি অবস্থিত। সংগ্রহশালাটি দেখতে স্থানীয় ও দূর-দুরান্ত থেকে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সববয়সী দর্শনার্থীর ভিড় জমে।

সম্প্রতি সরেজমিনে টেরা কুঠা বাড়িটিতে ঠুকতেই চোখে পড়বে সৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা রং-বেরঙের বাতি, বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালী ও নানান ফুলের বাগান। দৃষ্টি নন্দিত নানা কারুকাজে সুচিত রেলিং রাস্তা রয়েছে বসার স্থান। কয়েকটি বিভিন্ন বাণী সম্বলিত কচিত ফলক।

জানা যায়, ফকরুল হাসান পেশায় একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবি। তিনি এলাকায় একজন সমাজ সেবক, লোকসংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, গবেষক ও সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বই সংখ্যা ২টি, নিয়মিত লিখছেন বই।

১৯৮৮ সালে মামার দেওয়া প্রথম উপহার এক টাকার ৫টি নতুন নোট বইয়ে সযত্নে রাখেন তিনি। এ ভাবেই স্বজনদের দেয়া প্রতিটি ভালোবাসার উপহার জমাতে থাকেন বাক্সে। সে থেকেই শখের বশে টাকার পাশাপাশি নানান পুরনো জিনিস পত্র সংগ্রহ করাই তার নেশায় পরিণত হয়। সেই নেশায় শুরু করেন সংগ্রহ। এখন পর্যন্ত তিনি বিশ্বের ১৩০টির অধিক দেশের মুদ্রাসহ স্মারক, ডাক টিকেট সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়াও আমেররিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের স্মারক মুদ্রাসহ সংগ্রহে আছে দেশ-বিদেশের দিন দিবসকে কেন্দ্র করে বের হওয়া স্মারক নোট। দেশ-বিদেশের বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন মুদ্রাসহ স্মারক, পুরোনো দিনের ক্যামেরা, ক্যাসেট, ঘরি, টেপরেকর্ডার, টেলিভিশন, টেলিফোন, তামা-কাঁসা ইত্যাদি।

তিনি লিখেছেন দুটি বই, নিয়মিত লিখেছেন বই। তিনি ভালো কাজের পুরুষ্কার হিসেবে পেয়েছে অসংখ্য সম্মাননা ক্রেস্ট। এসকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে তার বড় ভাই, স্ত্রী ও পরিবারের সবাই।

কথা হয় দর্শনার্থী মো. মহসিন, এসএম শরীফ, তুহিন ভূইয়ার সাথে। তারা জানান, বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন মুদ্রাসহ বিশ্বের ১৩০টি দেশের মুদ্রা, ডাক টিকিট, স্মারক, তামা-কাঁসা, কুপিবাতি, হারিকেন, পুরোনো দিনের টেলিফোন ইত্যাদি তিনি সংগ্রহ করে রেখেছেন। প্রায় ৩৬ বছর যাবৎ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা ও হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্ত প্রায় জিনিসপত্র সংগ্রহে গড়েছেন ‘সংগ্রহশালা’।

সংগ্রাহক ফকরুল হাসান বলেন, ১৯৮৮ সালে মামা হাফেজ মাওলানা কেরামত আলীর দেওয়া প্রথম উপহার এক টাকার ৫টি নোট নতুন বইয়ে সযত্নে রাখি। এ ভাবেই স্বজনদের দেয়া প্রতিটি ভালোবাসার উপহার জমাতে থাকি বাক্সে। সে থেকেই শখের বশে পুরনো জিনিসপত্র, টাকা, ধাতব মুদ্রা, ডাক টিকিট, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য দুর্লভজিনিসপত্র সংগ্রহ করেছি। যা শখ থেকে নেশায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, লন্ডন, আমেরিকা, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানসহ দেশ ও বিদেশি ১৩০টি দেশের বিভিন্ন প্রকার আকারের কাগজি নোট ও মুদ্রা এখন পর্যন্ত যা বের হয়েছে তার সবগুলো সংগ্রহ করে অ্যালবামে সযত্নে রাখতে পেরেছি। শুরুতে এটা দেখে অনেকেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন, আবার অনেকে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই সংগ্রহশালায় শখের সংগ্রহের জিনিসগুলো দেখে বসে সময় কাটাতে পারবো এটাই আমার ইচ্ছা।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় আমি থাকব না। তবে, এই সংগ্রহশালা থাকবে। গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীরা জাদুঘর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না, বা কখনো দেখেনি। তারাসহ দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে এগুলো দেখবে। এই দেশের ও দেশের বাইরের পুরনো দিনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে এখানে এসে জানতে-বুঝতে পারবে, এটাই পরম পাওয়া।

আগামীত সংগ্রহশালাকে নতুন রুপে সাজিয়ে দর্শনীয় করার কাজ হাতে নিয়েছি। যাতে দর্শনার্থীরা মিউজিয়ামটি দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এ সংগ্রহশালাপ্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা ও সাহস, সহযোগিতা করেন বড় ভাই ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সহধর্মিণীসহ পরিবারের লোকজন।