ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভদৌরিয়া বলেছেন, চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতীয় বিমান বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তার দাবি, চীন কেন, প্রয়োজনে চীন যদি পাকিস্তানের বিমানঘাঁটির সাহায্যও নেয় তাহলেও লড়ার জন্য প্রস্তুত বিমান বাহিনী। পার্সটুডে।

তিনি বলেন, ‘সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের সেনা মোতায়েন করা আছে। যদি উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় তেমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে কঠোরভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।’

আগামী ৮ অক্টোবর বিমানবাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভদৌরিয়া বলেন, ‘লাদাখ সীমান্তে পঞ্চম প্রজন্মের বিমান, আধুনিক রাডার বসিয়েছে চীন। ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। ওরা শক্তিশালী কারণ যে পরিমাণ অর্থ চীন ওই খাতে বিনিয়োগ করে তা প্রচুর। কিন্তু দক্ষতার প্রশ্নে ভারতীয় বিমান বাহিনীও চীনের থেকে কম নয়।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তান এলাকার স্কার্দু বিমানঘাঁটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের। তারা ইতোমধ্যেই ওই বিমানঘাঁটি থেকে কয়েক দফা মহড়াও চালিয়েছে। পাক বিমানঘাঁটি চীন ব্যবহার করবে কি না তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু যুদ্ধের পরিস্থিতিতে স্কার্দু ব্যবহারের অর্থ হল অশুভ আঁতাঁতের মাধ্যমে যৌথ বিপদের আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া। আমরা উভয় শক্তির মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।’

চীনের মোকাবিলায় ভারতের প্রস্তুতি সম্পর্কে এয়ার চিফ মার্শাল ভদৌরিয়া বলেন, ‘লাদাখ একটি ছোট জায়গা। সেখানে আমাদের অল্পসংখ্যক বিমান রয়েছে। কিন্তু লাদাখকে কেন্দ্র করে একাধিক বিমানঘাঁটিতে বিমান মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।’

সেনা সূত্রের মতে, লাদাখকে কেন্দ্র করে ভারত-চীন উত্তেজনার মধ্যে উত্তর ভারত, পূর্ব ভারত এমনকী মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত সব বিমানঘাঁটিকে সতর্ক করে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের অন্তর্ভুক্তির ফলে শত্রু দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দ্রুত কার্যকর হামলা করার শক্তি বেড়েছে বলে এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভদৌরিয়া মন্তব্য করেছেন।

সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে কেনা পাঁচটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে ভারত। এরইমধ্যে লাদাখের আকাশে সেগুলো মহড়াও দিয়েছে। পূর্ব লাদাখের বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে সুখোই ৩০ এমকেআই, জাগুয়ার এবং মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান।

এদিকে, গত (শনিবার) হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে লাহুল-স্পিতি পর্যন্ত বিস্তৃত ৯.২ কিলোমিটার অটল টানেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটোল বিহারী বাজপেয়ীর নামে ওই টানেলের নামকরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টানেলটি দেশের সীমান্ত অবকাঠামোয় নতুন শক্তিতে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কার্যত চীনকে ইঙ্গিত করে বার্তা দিয়ে বলেন, সীমান্ত অবকাঠামোর অনেক প্রকল্প শেষ হয়েছে এবং আরও অনেকগুলোর উপরে দ্রুত কাজ চলছে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চলে অবকাঠামোগত অবস্থান শক্তিশালী হতে দেখে চীনা সরকারি গণমাধ্যম কার্যত অস্থির হয়ে প্রচারণা শুরু করেছে।

সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, তুষারপাতের কারণে মানালি-লেহ্ মহাসড়কে বছরে কমপক্ষে পাঁচ মাস যান চলাচল ব্যাহত হয়। সেই সমস্যা এ বার দূর করবে ‘অটল টানেল’। মানালি থেকে লেহ’র মধ্যে দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার কমে যাবে। যাতায়াতের সময়ও কমপক্ষে চার ঘণ্টা কমবে। এছাড়া তুষারপাত জনিত সমস্যা এড়ানো যাবে। ফলে আসন্ন শীতের মরশুমেও দ্রুত পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছনো সম্ভব হবে।

যদিও ওই ইস্যুতে চীনা সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে বলা হয়েছে, ‘অটল টানেল’ তৈরি করে ভারত খুব বেশি সুবিধা পাবে না। এব্যাপারে গতকাল (সোমবার) হিন্দি টিভি চ্যানেল ‘আজতক’–এর ওয়েবসাইটে গ্লোবাল টাইমসকে উদ্ধৃত করা বলা হয়েছে, ‘যেহেতু অঞ্চলটি পাহাড়ি এবং ঘনবসতিপূর্ণ, সেজন্য এটি কেবল সামরিক উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে। অটল টানেল খোলার সাথে সাথে অল্প সময়ের মধ্যে সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে এবং এর সাথে সামরিক সরবরাহও এই টানেলের মাধ্যমে পরিবহন করা যাবে। এটা সত্য যে এই টানেলটি তৈরির কারণে লেহ পৌঁছতে ভারতের অন্য অংশের চেয়ে কম সময় লাগবে। সামরিক স্থাপনা এবং কৌশলগত চ্যানেল হিসেবে এর বিশাল গুরুত্ব রয়েছে।’

চীনা সরকারি গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে ‘আজতক’-এ আরও বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ সময়ে, ওই টানেলটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরবরাহের জন্য প্রচুর পরিমাণে সহায়তা করবে। কিন্তু যুদ্ধের সময়ে, বিশেষত সামরিক সংঘর্ষে, এতে কোনও লাভ হবে না। টানেলটিকে অকেজো করার বিভিন্ন উপায় চীনা পিপলস আর্মির রয়েছে। ভারত এবং চীনের জন্য ভালো এটাই যে, উভয়েই একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে থাকা।

গ্লোবাল টাইমসে ভারতকে সংযম রাখার পরামর্শ দিয়ে যেকোনও উস্কানিমূলক কার্যকলাপ এড়াতে বলা হয়েছে। তাদের দাবি, কোনও টানেল ভারতের যুদ্ধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে না। ভারত ও চীনের যুদ্ধক্ষমতার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত ভারতের যুদ্ধক্ষমতা মোটেও সুসংহত নয়। ভারত চীনের ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে আছে।

গ্লোবাল টাইমসের মন্তব্য, এখন শান্তির সময় এবং ভারত বুঝতে পারছে না যে যুদ্ধ শুরু হলে অটল টানেল কোনও কাজে আসবে না। এই টানেলটি নির্মাণে গোটা দেশ খুশি। তবে ভারতীয় রাজনীতিকদের হিসেবে এটি কেবল প্রদর্শন এবং তারা তাদের রাজনৈতিক লাভের জন্য ব্যবহার করছেন। এটি স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক প্রচার। টানেল যুদ্ধে কাজ করবে কি না তা ভারতীয় রাজনীতিবিদদের বিবেচনার বিষয় নয়, বরং তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য এটি একটি অস্ত্র হিসেবে তৈরি করছে বলেও চীনা গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে ‘আজতক’ জানিয়েছে।