বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, কারখানা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি কাজের ঘাটতি ও উৎপাদন সক্ষমতা পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে না পারায় উদ্যোক্তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন, এটাই বাস্তবতা। পোশাকশিল্প মালিকদের এই নেতার দাবি, কারখানায় ৫৫ শতাংশ কাজ কমেছে। কোনো কারখানাই সামর্থ্যরে শতভাগ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচলের ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি বলেন, গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পোশাকশিল্পে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেও অধিক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারগুলো করোনার প্রভাবে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অনেক বড় বড় ক্রেতা দেউলিয়াত্বও বরণ করেছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে থেকেও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের মজুরি পরিশোধের জন্য সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করেছেন।

মার্চ মাসে কারখানাগুলো এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে ছিল যে, শুধু ১৫ দিন কাজ হয়েছে। কারখানাগুলো ৫০ শতাংশও রপ্তানি করতে পারেনি। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন মহাদেশ থেকে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করছিলেন। তারপরও উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের মার্চ মাসের মজুরি সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছেন। এপ্রিলে ২৫ দিন কাজের জন্য শ্রমিকদের পুরো মজুরি, আর যারা কাজ করেন নাই, তাদের মোট মজুরির ৬৫ শতাংশ পরিশোধ করেছেন মালিকরা। মে মাস পুরোটাই কাজ হয়েছে এবং যারা গ্রাম থেকে এসে কাজে যোগদান করতে পারেননি, তাদেরও মোট মজুরির ৬৫ শতাংশ পরিশোধ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত পোশাক খাতে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ করেননি, এমন শ্রমিকদের মোট ৫৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পোশাকশিল্প মালিকদের এই নেতা বলেন, চলমান সংকট উত্তরণ ও করোনাভাইরাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর পণ্য সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি

ছবি: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

র জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব ভার্চুয়াল মার্কেট প্লেসের প্রয়োজন। পোশাকপণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা যে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন, তা বর্তমান অবস্থায় শুধু অনলাইনে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করা যেতে পারে।

এজন্য আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা ধরে রাখতে বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানি হওয়া পণ্যমূল্যের ডলারপ্রতি অতিরিক্ত ৫ টাকা বিনিময় হার প্রদান, বিদেশি উৎস থেকে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ইউটিলিটিস পরিসেবাসমূহের ভর্তুকি-মূল্য নির্ধারণ। ড. রুবানা হক চলমান সংকট উত্তরণে আগামী বাজেটে সরকারের কাছে কিছু গুচ্ছ সুবিধা চেয়ে বলেন, ঢাকা থেকে যেসব পোশাক কারখানা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল-এসইজেডগুলোয় স্থানান্তরিত করা হবে, তাদের বিশেষ কর অবকাশ সুবিধা দিতে হবে। উচ্চহারে শুল্ক আরোপকারী যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের বাজারসমূহে রপ্তানির ওপর বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে।

পণ্য বহুমুখীকরণ ও কারিগরি উৎকর্ষ সহায়তা হিসেবে প্রণোদনা দিতে হবে। যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ, গবেষণা, উন্নয়ন, ট্রায়াল প্রোডাকশন ও প্রটোটাইপিং-সংক্রান্ত কার্যক্রম উৎসাহিত করতে বিশেষ সহায়তা সরকারকে দিতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাইলে, তার জন্য ‘এক্সিট পলিসি’ বা বেরিয়ে যাওয়ার নীতিমালা তৈরি করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন এবং নতুন উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তা দিতে হবে। এর মধ্যে কারখানা স্থানান্তর ও ভবন নির্মাণে সহায়তা, এসএমই ক্লাস্টার গঠনে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ, সমস্যাসঙ্কুল কারখানার জন্য বিশেষ সহায়তা ও জরুরি তহবিল গঠন করতে হবে আসছে বাজেটে। এর সঙ্গে টেকসই উন্নয়নে সবার জন্য কর্মসংস্থান উৎসাহিত করতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।