সিলেটে দিন দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সংকট। এতদিন করোনার চিকিৎসার জন্য দুটি বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। ফলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কভিড ইউনিট চালুর আগ পর্যন্ত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেই ভরসা রাখতে হচ্ছে পুরো সিলেট বিভাগের রোগীদের। বারবার আশ্বাস দিয়েও করোনা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ থেকে সরকার সরে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ ও করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় গঠিত প্রশাসনিক কমিটির পক্ষ থেকে সিলেটে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়। কভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। করোনা মোকাবিলায় সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বস্ত্র ও পাঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়াও সিলেট সফরে এসে সেই ঘোষণা দিয়ে যান। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের আপত্তির মুখে নগরীর নয়াসড়কস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল অধিগ্রহণ থেকে পিছু হটেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ৩০০ শয্যার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়ার ব্যাপারে দফায় দফায় সভায় আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতালটি অধিক টাকা চাচ্ছে এমনটি দাবি করে অধিগ্রহণ থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি টাকা নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। সরকার যে পরিমাণ টাকা দিতে সম্মত হবে সেটা দিয়েই তারা হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দিয়েও চুক্তি করা হয়নি। নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরীয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, তাদের ২০০ শয্যার হাসপাতাল কোডিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত। হাসপাতালটি অধিগ্রহণের জন্য সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছুর রহমান ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দফায় দফায় কথা বলেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ ২৫০ জনবলের বেতনের জন্য তিনমাসে ২১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। পরে সরকারের পক্ষ থেকে তিন মাসে ১৫ কোটি টাকা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। এতে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করা হয়নি। ডা. শাহরীয়ার জানান, ‘আমাদের কাছে টাকা বড় বিষয় ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম মানুষকে সেবা দিতে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সরকার হাসপাতালটিকে কভিড ডেডিকেটেড হিসেবে গ্রহণ করা থেকে পিছু হটেছে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অধিগ্রহণের জন্য অনেক দূর এগুনো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় সিলেটের কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে সৃষ্ট সংকট আরো বেড়েছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল জানান, ‘নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যে টাকা চেয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। অধিক টাকা চাওয়ায় তাদের সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সরকার ৫০ শয্যার সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় আলাদা করে হাসপাতাল অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না। এজন্যই নর্থ ইস্টের সাথে চুক্তি হয়নি।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন