কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী তারই এক রোগীর নামে নিবন্ধিত একটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সাবরিনার দাবি, ওই সিম কার নামে নিবন্ধিত তা তিনি জানতেন না। তবে পুলিশ বলছে, এটা বড় ধরনের অপরাধ, কারণ ওই সিম ব্যবহার করে কোনো অপরাধ করেও তিনি সহজেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত।
রোববার দুপুরে সাবরিনাকে হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তেজগাঁও থানার এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তারের পর ডা. সাবরিনাগ্রেপ্তারের পর ডা. সাবরিনাকরোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাবরিনার স্বামী আরিফুলও কারাগারে আছেন।
জিকেজির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দীর্ঘদিন ধরে যে ফোন নম্বরটি সাবরিনা ব্যবহার করে আসছেন, তা তার নামে নিবন্ধিত নয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে রোববার দুপুরে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সাবরিনার কক্ষে তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ওই ফোন কার নামে নিবন্ধন করা জানতে চাইতেই হতভম্ব হয়ে যান বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিভিশন আলোচনায় হাজির হওয়া এই কার্ডিয়াক সার্জান।
প্রথমে তিনি বলেন, ওই সিম কার নামে নিবন্ধিত, তা তিনি জানেন না। পরে ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে ডেকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন সাবরিনা। গাড়ি চালক অন্য একজনকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে বলেন, ওই সিম সাবরিনারই এক রোগীর নামে নেওয়া।
সাবরিনা তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিমটা একজন দিয়েছে, এটা আমার রোগীর নামে হয়ত। খুব শিগগিরই পরিবর্তন করে নেব।”
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সাবরিনার ওই ফোন নাম্বারটি বাসাবো এলাকার পারভীন আক্তার নামে এক নারীর নামে নিবন্ধিত।
“এভাবে সিম ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। এই নম্বর ব্যবহার করে তিনি কোনো অপরাধ করলে দায় পড়বে আরেকজনের ওপর। সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনো জালিয়াতি হয়েছে কি না সেটাও একটি বিষয়। এটা একটা বড় অপরাধ।”
নিজের অফিসে ডা. সাবরিনা আরিফের নামফলকনিজের অফিসে ডা. সাবরিনা আরিফের নামফলকসাবরিনার ওই সিম ব্যবহারের বিষয়টিও তদন্ত করা হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রুবায়েত জামান।
সাবরিনার গাড়ি চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, গত প্রায় একবছর ধরে তিনি এই চাকরি করছেন। শুরু থেকেই ওই নম্বরেই তিনি ‘ম্যাডামের’ সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছেন।
সৈয়দ মোশাররফ হুসাইন নামে এক সাবেক আমলার মেয়ে সাবরিনা পড়ালেখা করেছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ২৭তম বিসিএসে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
সাবরিনার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে। তবে আরিফুলকে বিয়ে করার পর তাদের কোনো সন্তান হয়নি বলে তাদের ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার আরিফুলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাবরিনা দাবি করেন, দুই মাস আগে তাদের তালাক হয়ে গেছে। এখন তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর ব্যবহৃত গাড়িডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর ব্যবহৃত গাড়িশেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ৮ জুন স্বামী আরিফুলের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন সাবরিনা। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, আরিফুল গত ৪ জুন হাসপাতালে গিয়ে তাকে মারধর করেছেন।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিডি করার পর পুলিশ তদন্ত করতে হাসপাতালে গিয়েছিল। সাবরিনা তখন বলেছিলেন, তারা স্বামী স্ত্রী মিটমাট করে নিয়েছেন। ফলে পুলিশ আর এগোয়নি।”
সাবরিনার ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, রনি নামে সাবরিনার এক ব্যবসায়ী বন্ধু থাকেন মোহাম্মদপুরে। নিজে গাড়ি চালিয়ে প্রায়ই তিনি রনির বাসায় যেতেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, তারা এ বিষয়গুলো নিয়েও খোঁজ রাখছেন। জেকেজির জালিয়াতিতে আর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। সূত্র: বিডিনিউজ ডটকম