যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করোনার ভ্যাকসিন আগামী আগস্ট থেকেই বাজারে আসতে পারে। সম্প্রতি অক্সফোর্ডের সেন্টার ফর পারসোনালাইজড মেডিসিনের প্রফেসর অ্যাড্রিয়ান হিল এই আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। আইরিশ মিরর-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা ও ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন, নিরাপদ ও কার্যকর রোগ প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনে ১২-১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি টিকা পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের টিকাটি। হিল জানান, তারা যে ভ্যাকসিন তৈরি করছেন তা করোনা নির্মূলে সক্ষম হবে বলে ৮০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী গবেষকরা। ভ্যাকসিন তৈরির নেতৃত্ব দেওয়া এ আইরিশ বিজ্ঞানী বলেন, এটি (ভ্যাকসিন) আগস্টের দিকেই আসতে পারে। তবে সংক্রমণের হার খুব বেশি কমে গেলে সেক্ষেত্রে বিলম্বের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রফেসর হিল আগেও সতর্ক করেছিলেন, যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত কমে গেলে তাদের গবেষণাও পিছিয়ে যেতে পারে। পর্যাপ্তসংখ্যক রোগী না পেলে ট্রায়ালে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। গত এপ্রিলে শিশু ও ৫৫ বছর বয়সোর্ধ্বসহ ১০ হাজার ২৬০ জনের ওপর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ ফার্মা সিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ঘোষণা দিয়েছে, অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি তাদের ভ্যাকসিনটি কার্যকর প্রমাণিত হলেই ২০০ কোটি ডোজ তৈরি করা হবে। প্রফেসর হিল জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনটি ইনহেলারে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে ১০ কোটি ডোজ সরবরাহে সম্মত হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিও করেছে তারা।
করোনা চিকিৎসায় আসছে অ্যান্টিবডি থেরাপি : যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের গবেষকরা করোনা চিকিৎসায় অ্যান্টিবডি চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বলে জানা গেছে। করোনা সংক্রমিত রোগীদের ক্ষেত্রে এ চিকিৎসাপদ্ধতি জীবন রক্ষাকারী হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা নতুন এ চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছে। এ চিকিৎসাপদ্ধতি বা থেরাপি শুরুতে বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যান্টিবডি ইনজেকশন তাৎক্ষণিকভাবে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা দিয়ে শরীরকে ক্ষমতাশালী করে। যারা সংক্রমণের প্রাথমিক ধাপে থাকেন, তাদের জন্য এ চিকিৎসাপদ্ধতি চিত্র পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসকেল সারিওট বলেন, তাদের এ চিকিৎসাপদ্ধতি মূলত দুটি অ্যান্টিবডির যৌথ সংমিশ্রণে তৈরি। কারণ, দুটি অ্যান্টিবডি থাকলে একটি অ্যান্টিবডির প্রতিরোধের সক্ষমতা হ্রাস হওয়ার সুযোগ কম। তবে এ ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে চিকিৎসার খরচ। ভ্যাকসিন উৎপাদনের চেয়ে অ্যান্টিবডি থেরাপির খরচ বেশি। তবে সারিওট বলেন, অ্যান্টিবডি চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না, তাদের জন্য অ্যান্টিবডি থেরাপি প্রয়োজন হবে। ভ্যাকসিন যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হবে, অ্যান্টিবডির উদ্দেশ্য মূলত একই, যা সাধারণত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া শুরু করে।
বিশ্বে এখন প্রায় ২০০টি গবেষক দল সবার আগে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে নেমেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামনের সারিতেই রয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি যৌথভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে কাজ করছে এবং ব্রাজিলে মানুষের ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারীর কেন্দ্রস্থল ব্রাজিল। ভ্যাকসিনটি কার্যকর হবে কি না, তা আগস্টের মধ্যেই জানা যাবে বলে আশা করছেন তারা। ভ্যাকসিনটির দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে তারা ভ্যাকসিনটির উৎপাদন শুরু করেছেন। এটি কার্যকর হতে হবে ধরে নিয়ে তারা এ বছরের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটি ডোজ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার মাইক্রোসফট সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটস অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করেছেন, যাতে তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের অর্ধেক ডোজ স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য সরবরাহ করা যায়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন