প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস কারণে মারাত্মক সংকুচিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছর শেষে বিশ্ব অর্থনীতি অন্তত ৫.২ শতাংশ সংকুচিত হবে। আর বাংলান্ডেন্ডেদশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল কভিড-১৯ ও বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এটি মূলত অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের’। সংস্থাটির ওয়াশিংটনের সদর দফতর থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, কভিড-১৯-এর কারণে শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায়, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ১ দশমিক ৬ শতাংশে নামতে পারে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছর বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছর তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় দীর্ঘ লকডাউনের কারণে ভারত ও নেপালের মতো বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তিগত ভোগ মারাত্মকভাবে কমেছে। মহামারী ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে দেশের প্রধান প্রধান শহর থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী গ্রামে চলে গেছে।
ফলে শিল্প উৎপাদনসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সার্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগতভাবে সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের ব্যাপক দরপতন থেকে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি হ্রাস এর জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, মহামারীর কারণে এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ হারে সংকুচিত হবে। বিশ্বের বড় অংশের অর্থনীতিতে মাথাপিছু আয়ে যে সংকোচন দেখা দেবে, তা ১৮৭০ সালের পর সর্বোচ্চ হবে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম মহামন্দা দেখা দেবে।
এ ছাড়া বিশ্বের মাথাপিছু আয় গড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হারে হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে। বিশ্বব্যাংক বলছে, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে পড়ে এবং প্রাথমিকভাবে ছোট আকারে ছড়ালেও এখন তা দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ অঞ্চলে মৃত্যুর মিছিল বাড়ানো ছাড়াও মহামারীর কারণে দারিদ্র্য দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে।