কোনো ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাও আপনাদের কাছে ঘুষ বা মাশোয়ারা চাইলে তা আমাকে নির্ভয়ে জানান। আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে দেখবো। সারাদেশের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সম্মেলনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এ আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (৯জুলাই) প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী দেশের ৬৬০ থানার সকল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন: আপনারা নিজে অবৈধ উপায়ে কোন অর্থ উপার্জন করবেন না, অন্য কাউকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগও করে দেবেন না।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ৬৬০ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) হলো বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিচ্ছবি। আপনাদের ওপরই বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। আপনাদেরকে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে জনগণ আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারে এবং আপনাদের প্রত্যেককে একজন ‘সোশ্যাল লিডার’ হিসেবে সম্মান করে।
পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কল্যাণ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া, আবাসন এবং অবসর পরবর্তী সময়েও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
ড. বেনজীর বলেন, সৎ ও স্বচ্ছ উপায়েও যেনো পুলিশের প্রত্যেক সদস্য জীবন যাপন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সদস্যদের জন্য কল্যাণ পরিকল্পনা তৈরী করা হচ্ছে।
পুলিশ প্রধান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করতে কাজ করছি আমরা সবাই। সবার আগে বাংলাদেশ পুলিশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। পুলিশের কোনো সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশকে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে জনগণের সাথে থাকতে চাই।
তিনি বলেন, শারীরিক শক্তি ব্যবহার না করে আইনি সক্ষমতা ও মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বর্তমানে করোনায় পুলিশের অনন্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন: গত তিন মাসে পুলিশ জনগণের সাথে থেকে জনগণের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য যা করেছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব। জনগণ পুলিশকে এর প্রতিদানও দিয়েছে। পুলিশ মানুষের অগাধ বিশ্বাস, সম্মান ও আস্থা অর্জন করেছে। মানুষ পুলিশকে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে। যে মর্যাদা, যে সম্মান মানুষ পুলিশকে দিয়েছে তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর করোনা বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগে পুলিশ সদস্যরাই প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে জীবন উৎসর্গকারী ৪৭ জন শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্যকে হারিয়ে বিপন্ন এসব পরিবারের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।