আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মূল্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে নিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো, এমন অভিযোগের পর পাকিস্তান এখন চেষ্টা করছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ঋণ পরিশোধ নিয়ে আলোচনা করার । ব্লুমবার্গ।
ইসলামাবাদের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, চীনা ও স্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো অসাদু উপায় অবলম্বন করে দাম বিপুলভাবে বাড়িয়ে নিয়েছে। আর করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচনার তাগিদ আরো বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়লা প্লান্ট হুয়ানেঙ শানদং রুই (পাকিস্তান) এনার্জি অ্যান্ড পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক কোম্পানি ৩০ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির দাম বাড়িয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। আর কেবল দুটি প্লান্ট স্থাপনে মূলত সুদ পরিশোধের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়ে বাড়ানো হয়েছে ২০৪ মিলিয়ন ডলার।
বেইজিংয়ের চাপে ইসলামাবাদ কথিত দুর্নীতির ব্যাপারে তদন্ত করতে বাধ্য হয়। তবে দেশটি পর্দার অন্তরালে আলোচনা করে অনুকূল চুক্তি করতে চেয়েছিল। আলোচনা সম্পর্কে অবহিত সূত্র জানায়, পাকিস্তান এখনই বিদ্যুতের মূল্য নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। তবে তারা ঋণ পরিশোধ ১০ বছর পর্যন্ত বিলম্ব করতে চায়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তান মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমরা যেভাবেই হোক না কেন, কিছু ছাড় চাচ্ছি। এ কারণেই আমরা সব স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর সাথে প্রথমে চুক্তি করতে চাই। অগ্রগতি দেখে আমরা প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করব।
ইমরান খান ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরাধিকার সূত্রে দায় পরিশোধ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কয়েক মাস বিলম্বের পর ইসলামাবাদ অবশেষে ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনার জন্য আইএমএফের কাছে আবেদন করে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কিছুটা সহায়ক হয়।
হুয়ানেং কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল্য নির্ধারণ করতে সহায়তা প্রদানকারী বেইজিংভিত্তিক প্রকৌশলী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেং চেং জিন গ্রুপ জানায়, মূল্য ছিল যৌক্তিক পর্যায়ে।
কোম্পানি বলে, সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা যেতেই পারে। তবে এর মানে এই নয় যে আগের মূল্য নির্ধারণ ছিল ভুল। আর অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য পাকিস্তানকে সুস্পষ্ট নথিপত্র দেখাতে হবে।
হুয়ানেং প্রজেক্টকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দানকারী এগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না শ্যানদং ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা বলেন, ঋণ সম্প্রসারণ ও ছাড় দেয়াসহ সব বিকল্প হাতে রয়েছে। কারণ পাকিস্তান আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হুয়ানেং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির ৫১ ভাগ শেয়ারের মালিক পাওয়ার চায়নাও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক অ্যালিস ওয়েলস প্রায়ই ৬২ বিলিয়ন ডলারের চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের সমালোচনা করে এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে জানান। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই প্রকল্পটি আসলে চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর জন্যই লাভজনক হবে।
গত মাসে এক ব্রিফিংয়ে ওয়েলস পাকিস্তানের বোঝা লাঘবের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই থাকে। সরকারের জ্বালানি নীতিতে এই খাতে মুনাফার নিশ্চয়তা দেয়া থাকায় এমনটি ঘটছে বলে ধারণা করা হয়।
ইমরান খানের সরকার সরকারি ও বাণিজ্যিক খাতে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের সুদে ছাড় দেয়ার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যে আলোচনা করছেন, তা সাথে সম্পর্কহীন এই ঋণ পরিশোধের কথাবার্তা। চলতি মাসে বেইজিং জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ৭৭টি উন্নয়নশীল দেশের ঋণ পরিশোধ স্থগিত রেখেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।