থমকে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্লাজমা থেরাপির সম্প্রসারণ কার্যক্রম। অর্থের বরাদ্দ না থাকায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া অ্যান্টিবডি কিট না থাকায় প্লাজমা থেরাপিতে আশানুরূপ ফল মিলছে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অ্যান্টিবডি কিট আমদানি করা হলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এনওসির জন্য তা আটকে আছে বিমানবন্দরে।
ঢামেক সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ৮৫ জন করোনা আক্রান্ত প্লাজমা দিয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকর ফল পাওয়া গেছে। এরপরই প্লাজমা থেরাপির কার্যক্রম সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেন এর উদ্যোক্তা ঢামেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান। কিন্তু এই প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের আগে আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হয়। এজন্য কিটের প্রয়োজন। কিন্তু এই কিট সংকটের কারণে প্লাজমা থেরাপি কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান কিট আমদানিও করে। কিন্তু এনওসি না পাওয়ার কারণে ওই কিট বিমানবন্দরে আটকে আছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাছির উদ্দীন এ প্রতিবেদককে জানান, কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে চলছে প্লাজমা থেরাপির কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত ২০-২৩ জনকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, ফলোআপের জন্য কিছু কিট এবং রিএজেন্টের প্রয়োজন হয়- এগুলোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ৪২ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি, প্লাজমা ও টাইটার পরীক্ষার কিট এবং প্লাজমা দেওয়ার আগে-পরে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এই অর্থ লাগবে।
জানা গেছে, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ওই অর্থ সহায়তা চাওয়া হলেও এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ মেলেনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল) কাছে অর্থ সহায়তার আবেদন জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি মন্ত্রণালয়ে গেছে।
বিষয়টি জানতে পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসানের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে তা রেখে দেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এ ভাইরাস মোকাবিলা করে টিকে থাকতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিই অসুস্থদের সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার হবে। বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করার সম্ভাব্যতা দেখতে এপ্রিলের শুরুতে আগ্রহের কথা জানান ঢামেকের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. এম এ খান। গত ১৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। প্লাজমা থেরাপির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো ফল পাওয়ায় এখন অনেকেই প্লাজমা থেরাপির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাই ঢামেক হাসপাতালের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটি প্রয়োগের আগে আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিবডি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তির কী পরিমাণ প্লাজমার প্রয়োজন হবে। এজন্য অ্যান্টিবডি কিটের প্রয়োজন। কিন্তু কিট না থাকায় ওই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা না করেই প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে অনেকের ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল মিলছে না। গত ২৪ মে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভায় কিট সংকটের তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সভায় পরামর্শক কমিটির সদস্যরা দ্রুততম সময়ে কিট সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে পরামর্শ দেয়। এরপর দুই-একটি প্রতিষ্ঠান কিট আমদানিও করে। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এনওসি না পাওয়ায় ওই কিট বিমানবন্দরে আটকে আছে। কিট আটকে থাকায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে করে যাদের প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে তা অনুমান করেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এবং পরিচালক রুহুল আমিনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন