বিদায়ী জুন মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৩৬৮ জন নিহত ও ৫১৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ২০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও আহত হয়েছেন চারজন। নৌপথে ১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত ও ৬০ জন আহত এবং ১০ জনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে গতকাল সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, জুনে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬২ জন চালক, ১২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১৩ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৫৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আবার ২১ জন বিজিবি, ১৮ জন আনসার, ১৩ জন পুলিশ ও পাঁচজন সেনাবাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া ২৮ জন শিশু, ২৩ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সাতজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১১৬ জন চালক, ৯৮ জন পথচারী, ৪৯ জন নারী, ৪৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ২১ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, আটজন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সাতজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রকৌশলী, পাঁচজন পুলিশ ও দুজন বিজিবি সদস্য।
জুন মাসে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ৩৪.৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ২৪.১৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২.১ শতাংশ বাস, ৯.২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৮.১১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪.৩৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ৮ জুন। এদিন ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন প্রাণ হারান। আহত হন ২৫ জন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১০ জুন। এদিন আটটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত এবং ১৪ জন আহত হন। মোট দুর্ঘটনার ৫১.১২ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৫৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৭.৫৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ১.১২ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ০.৫৬ শতাংশ ঘটে চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে। পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই মাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৮.৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.৫৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৩.৯৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৭৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.১২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়। আগের মাস মের তুলনায় জুনে সড়ক দুর্ঘটনা ৫৬.১৪ শতাংশ, নিহত ৫৭.৩৪ শতাংশ ও আহতের হার ৪৩.৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহির অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সরকারের আন্তরিকতা ও বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও বর্তমান সরকারের দুটি বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।