মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। সোমবার আদালতের নির্দেশের পর গতকাল মঙ্গলবার থেকে তার রিমান্ডে জেরা শুরু করে কুয়েতের সিআইডি। তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি কুয়েত সরকার। এদিকে বাংলাদেশেও এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এজন্য দেশে থাকা তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে যাচ্ছে দুদক।
ঢাকা ও কুয়েতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মাত্রা গুরুতর বিবেচনাতেই যতদিন প্রয়োজন ততদিন রিমান্ডে রাখার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় আদালত। তাই এমপি পাপুলের পক্ষে তার আইনজীবী ও কুয়েতি পার্টনার জামিনের আবেদন করলেও তা রাখা হয়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো আমরা কোনো তথ্য জানি না। কুয়েতে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমাকে বলেছিলেন নতুন তথ্য পাওয়া মাত্রই জানাবেন। তিনি নতুন কিছু না পাওয়ায় আমাকেও কিছু জানাননি। বাংলাদেশি কোনো নাগরিক তিনি এমপিই হোক বা ডাক্তারই হোক বা যেই বিদেশে যেকোনো কারণে আটক হলে আমরা তার প্রাপ্য আইনি অধিকার নিশ্চিত করে থাকি। সেই হিসেবে আমরা তাকেও কনস্যুলার সুবিধা দেব। তবে সেজন্য আগে কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাজী শহীদ ইসলাম কুয়েতে লাল না সবুজ পাসপোর্টে গিয়েছে আমরা সেটাও নিশ্চিত নই। তবে মিডিয়ার মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি তিনি লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেননি। সেক্ষেত্রে তিনি হয়তো কূটনৈতিক সুবিধার আওতায় আসবেন না। তবে আমরা এখনো এর কিছুই নিশ্চিত নই। এর আগে গালফ নিউজ এবং আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপি পাপুল কুয়েতে ভিসা বাণিজ্যের নামে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। কুয়েত সিআইডি কর্মকর্তারা পাঁচ বাংলাদেশিকে জেরা করে জানতে পেরেছে তাদের প্রত্যেকেই কুয়েত যেতে সংসদ সদস্য পাপুলকে তিন হাজার দিনার করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও প্রতি বছর তারা ভিসা নবায়ণের জন্য সাংসদকে বাড়তি টাকা দিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কাজী শহীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ এনেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এর আগেও কুয়েতের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারে জড়িত থাকার খবর প্রকাশিত হয়। গত মার্চে কুয়েতে যাওয়ার পর থেকে তিনি দেশটির সিআইডি কর্মকর্তাদের নজরবন্দী ছিলেন। পরে গত শনিবার রাতে কুয়েত সিটির মুশরিফ এলাকার বাসা থেকে এমপি পাপুলকে আটক করে তাদের দফতরে নিয়ে যায় সিআইডি।
অনুসন্ধানে দুদক, করবে জিজ্ঞাসাবাদ : এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে দুদকে যে অভিযোগটি পেশ করা হয়েছে তাতে কুয়েতে মানব পাচার করে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ১৭৪ পাতার অভিযোগে মানব পাচার, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকিং কার্যক্রমে দুর্নীতি, নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, পাপুল ৫০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক হন। একই ব্যাংকে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নামে রয়েছে ৩০ কোটি টাকার শেয়ার। এ ছাড়া পাপুলের নামে-বেনামে বিপুল অর্থ-সম্পদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ওই অভিযোগে। গত মার্চের প্রথম দিকে অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু হয়। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে অনুসন্ধান কিছু দিন বন্ধ ছিল। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। সূত্র জানায়, এমপি পাপুলকে এ মুহূর্তে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ না থাকায় তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন ইসলামসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমপি পাপুল দেশে এলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন