
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সব দেশ যেন সময়মত করোনা ভ্যাকসিন পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এই টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শনিবার (২৬সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৮টায় এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (নিউইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদে তার পূর্বনির্ধারিত রেকর্ড করা ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সকল দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময় মত এবং একইসঙ্গে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ প্রমাণ করেছে পৃথিবীর সবার ভাগ্য এক সুতোয় গাঁথা। মহামারীকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ মোকাবিলা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বাংলাদেশকে যে সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং সেখান থেকে উত্তরণে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে তা সবিস্তারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব দেয়া হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলেও টিকা তৈরির দৌড়ে এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোকে বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ আরো জোরালো করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নেয়ারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই ব্যাপারে আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি বাংলাদেশের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে তার সরকার বদ্ধপরিকর।
এসময় অভিবাসী শ্রমিকদের সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর মধ্যে বিদেশে বাংলাদেশের অনেক কর্মীর কাজ হারানোর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি তার ভাষণে বলেন, অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কভিড পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতার সঙ্গে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসী গ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জলবায়ু পরিবরর্তনের প্রভাব এবং সন্ত্রাসের মত বিষয়গুলো কোন রাষ্ট্রের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।
তিনি বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, এই নীতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র। এ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে নিয়মিত অবদান রেখে চলেছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে শান্তিরক্ষীর সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে।
সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম দায়িত্ব।
করোনা মহামারীতে এবার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন বিশ্বনেতারা। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে ১৭ বার বক্তৃতা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরের মত এবারো বাংলায় নিজের বক্তব্য দেন তিনি।

