দুপুর বা রাতে খাবার খাওয়ার পর অনেকেই হঠাৎ তীব্র ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে তো খাওয়া শেষ হতেই ঘুম এসে যায়। কাজ না থাকলে অনেকে এই সুযোগে একটু ঘুমিয়েও নেন। কারণ চাইলে তো সবসময় ঘুম আসে না—তাই এ সময়টা কাজে লাগান অনেকেই।

এই খাওয়ার পর ঘুমঘুম অনুভূতিকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ফুড কোমা’, আর চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম ‘পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল সোমনোলেন্স’। বিশেষ করে যারা ভাত বেশি খান, তাদের মাঝে এটি বেশি দেখা যায়; কারণ ভাত হলো কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উৎস। একটি ভারতীয় গণমাধ্যম এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ভাত খাওয়ার পর ক্লান্তি বা ঘুমভাবের দুটি মূল কারণ

১. ইনসুলিন নিঃসরণ ও রক্তে শর্করার ওঠানামা

ভাত হলো উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাদ্য, যা দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়।

ভাত খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।

এই শর্করাকে কোষে পৌঁছাতে শরীর তখন বেশি পরিমাণ ইনসুলিন ছাড়ে।

অতিরিক্ত ইনসুলিনের কারণে রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যায়।

এই দ্রুত ওঠানামার ফলে শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি ও ঘুমভাব দেখা দেয়।

২. ট্রিপটোফ্যান, সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনের প্রভাব

কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পর ইনসুলিন রক্তের বেশিরভাগ অ্যামাইনো অ্যাসিডকে পেশিতে পাঠায়, কিন্তু ট্রিপটোফ্যান তুলনামূলকভাবে কম প্রভাবিত হয়।

ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কে পৌঁছে সেরোটোনিন এবং পরে মেলাটোনিন উৎপন্ন করে।

মেলাটোনিন ঘুম-জাগরণের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্বাভাবিকভাবেই ঘুমঘুম অনুভূতি বাড়ায়।

কীভাবে এ সমস্যা কমানো যায়?

পরিমাণ কমান: একবারে অনেক ভাত না খেয়ে অল্প খান এবং প্রোটিন ও সবজির পরিমাণ বাড়ান।

সঠিক মিশ্রণ: ভাতের সঙ্গে মাছ, ডিম, মাংসের মতো প্রোটিন এবং সালাদ-সবজির মতো ফাইবার খেলে কার্বোহাইড্রেট ধীরে শোষিত হয়; ফলে হঠাৎ শর্করা বাড়ে না।

খাওয়ার পর হাঁটা: খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিট হাঁটলে হজম ভালো হয় এবং রক্তে শর্করাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।