একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ঘোষণায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি হয়েছেন। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারাও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন । তবে শিক্ষাবিদরা ভর্তির পর কিছুটা সময় নিয়ে ক্লাস শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই তাদের এ পরামর্শ।
উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা তানভীর করোনার কারণে এই বছরটি ‘ক্ষতি’ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা করছিলেন। তবে একাদশে ভর্তির ঘোষণায় খুশি হয়েছেন তিনি। ডেইলি বাংলাদেশের কাছে দ্রুত ক্লাস শুরু হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
তানভীর বলেন, আমি শুরুতে ভেবেছিলাম এবার আর একাদশে ভর্তি হওয়া হবে না। পরিস্থিতি তেমনই মনে হচ্ছিলো। বোর্ড ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমি খুশি। এখন অন্তত একটা পরিচয় হবে। পড়াশোনাও হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে আগে থেকেই তৎপর ছিলাম। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করার জন্যই কিছুটা দেরি হয়েছে। ভর্তি কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করা গেলে ক্লাসও শুরু করে দেয়া যাবে। তবে কীভাবে ক্লাস শুরু হবে সেটি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
এদিকে এ বছরের ভর্তি নিয়ম অনুযায়ী এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে না। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কমপক্ষে ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারবে। ভর্তির জন্য আলাদা করে কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না, ফলাফল বিবেচনায় ভর্তি করা হবে।
ভর্তির পুরো কাজটি নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদেরকে সহায়তা করবে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আগামী ৯ আগস্ট শুরু হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এবার একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া অন্য কোটা থাকবে না। তবে প্রতিবন্ধী, বিকেএসপির শিক্ষার্থী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে জাতীয় পর্যায়ে অসামান্য সাফল্যের অধিকারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ জন্য তাদেরকে বোর্ড অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
সারা দেশে ভর্তির জন্য এবার ২২ থেকে ২৩ লাখ আসন রয়েছে। বিপরীতে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী। ফলে উচ্চমাধ্যমিক মোট আসন নিয়ে সমস্যা হবে না। তবে ভালো কলেজগুলোতে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতা হবে।
একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডও এই সময়ে ক্লাস শুরুর পক্ষে নয়। তাদের লক্ষ্য হলো ভর্তির কাজটি শেষ করে রাখা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেই ক্লাস শুরু করা হবে।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ভর্তি নেয়ার সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়, তবে এখনই ক্লাস শুরু করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে হয় না। করোনা পরিস্থিতির বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ক্লাস হবে? সংশ্লিষ্টদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে ৯ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। https://www.xiclassadmission.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এবারও আগের বছরের মতো আবেদন ফি ১৫০ টাকাই থাকছে। নগদ, সোনালী সেবা, টেলিটক, বিকাশ, শিওর ক্যাশ ও রকেটের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। ২৬ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
দ্বিতীয় পর্যায় ও প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। এই পর্যায়ের নিশ্চায়ন করা যাবে ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর। তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ করা হবে ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর। এর ফল ও দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রকাশ হবে। এই পর্যায়ের নিশ্চায়ন করতে হবে ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর। কলেজভিত্তিক চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হবে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। আর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কলেজে ভর্তি হতে হবে।