বাংলাদেশের আলোচিত একজন হাসপাতাল মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মি. সাহেদকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও অনিয়মসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে এর আগে গ্রেফতার করা হয়।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময তাকে সাতক্ষীরায় সীমান্ত এলাকা থেকে তাতে গ্রেফতারের কথা র্যাব জানিয়েছিল।
রায়ে যা বলা হয়েছে
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্র আইনে তাকে দু’টি ধারায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
একটি ধারায় মোহাম্মদ সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর অন্য একটি ধারায় দেয়া হয় সাত বছরে সশ্রম কারাদণ্ড।
আদালতের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে তিনি জানান যে বিচারক বলেছেন, তার মতো ভদ্রবেশী প্রতারক সমাজে মানুষের ক্ষতি করেছে। সে আদালতের অনুকম্পা পাওয়ার যোগ্য নয়।
মি. সাহেদের আইনজীবী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন এই রায়ে তারা অসন্তুষ্ট। তিনি বলেছেন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে গ্রেফতারের পর তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মদ, ফেনসিডিল, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করার পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছিল।
তিরিশে জুলাই করা মামলায় অগাস্টের শেষের দিকে অভিযোগ গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরে আদালতে আট কার্যদিবস শুনানি শেষে এই রায় দেয়া হল।
করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও অনিয়মের বহুল আলোচিত ঘটনায় বেশ কটি মামলা হয়েছে। তবে মি. সাহেদের বিরুদ্ধে প্রথম রায় হলো অস্ত্র আইনের মামলায়।
ভুয়া সনদ, রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি ঊর্ধ্বমুখী থাকা অবস্থায় জুলাই মাসের শুরুর দিকে রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতির বিষয়টি প্রথম সামনে আসে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে ৭ই জুলাই সিলগালা করে দেয়া হয় ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।
এর পর পালিয়ে যান মি. সাহেদ। সরকারিভাবে করোনাভাইরাস টেস্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে চুক্তি করা হাসপাতালগুলোর একটি ছিল রিজেন্ট হাসপাতাল।
ওই হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। অভিযানের পর র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে এর মধ্যে ৪,৫০০টি পরীক্ষা ফলাফল ভুয়া ছিল। নমুনা পরীক্ষা না করেই রোগীদের ভুয়া ফলাফল দেয়া হয় বলে তারা জানিয়েছিল।
নানা টকশোতে বক্তব্য দেয়া মোহাম্মদ সাহেদ আরও বেশি আলোচনায় আসেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে তার বহু ছবি ফেসবুকে প্রকাশের পর।
প্রতারণার মাধ্যমে মি. সাহেদ বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে তথ্য দিতে একটি হটলাইন খোলা হয়।
এছাড়া অভিযোগ ওঠে যে রিজেন্ট হাসপাতালের লঅইসেন্স ছিল না, এবং এরকম প্রতিষ্ঠানের সাথে কিভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চুক্তি করলো সেটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এক পর্যায়ে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
জুলাই মাসের ১৫ তারিখ সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন মি. সাহেদ। তিনি বোরকা পরে ছদ্মবেশে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে র্যাবের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়।