বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর মহাসচিব মিলে বানিয়ে দিচ্ছেন পরীক্ষা পাশের মার্কসীট। পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করলেও এমন মার্কসীট বানিয়ে দিচ্ছেন তারা। আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাবার অধীনে পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেন তার ছেলে। এমনকি বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই মহাসচিবের যোগসাজশে বোর্ডে বিভিন্ন নিয়োগও দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। ডিবিসি নিউজ।

এসব কিছুই হচ্ছে কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া-বেফাকে।

২০১৭ সালে দেশের সবচেয়ে বড় কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া-বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পান আবু ইউসুফ। তার সময়ই কওমী শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে প্রথম বারের মতো প্রশ্নফাঁস হয়।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবূ ইউসুফের ছেলে সুলতান আহমদ মেরাজ সানাবিয়্যাবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় সারা বাংলাদেশে ৪র্থতম স্থান অর্জন করেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসফের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে ফযিলত বা স্নাতক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম হন তার ছেলে সুলতান আহমদ মেরাজ। একই পরীক্ষায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মেয়ে উম্মে যিয়াদ শাহীনা হন ১৪তম।

এ বিষয়ে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জামিয়া মোহাম্মদিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নুরুজ্জামান নোমানী বলেন, “যিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তার ছেলে-মেয়ে যদি পরীক্ষার্থী হয়, তাহলে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে উনার এই পদে না থাকাই উত্তম। এখন যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, এর তদন্ত করতে হবে।”

এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করলেও ভুয়া মার্কসীট বানিয়ে দিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফ ও মহাসচিব আব্দুল কুদ্দুস একাধিকবার ফোনে আলাপ করেন। যা ডিবিসি নিউজের হাতে রয়েছে। এমনকি বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগও করেন মহাসচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

এসব কাজে জড়িত থাকায় বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফসহ তিনজনকে বহিস্কার করা হলেও বহাল তবিয়তে বোর্ডের মহাসচিব।

শায়খে চরমোনাই সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, “নিরপেক্ষভাবে তার গঠন মূলক প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করুক। কেউ যাতে জবাভবদিহিতার উর্ধ্বে না থাকে এমন সিস্টেম গড়ে উঠুক।”

তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফ। ফোনে জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বেফাকুল মাদারিসিল আবাবিয়া বাংলাদেশ-বেফাক এর বহিস্কৃত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফ বলেন, “এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া এবং মিথ্যা। কেউ প্রমাণ করতে পারেনি, পারবেও না।”

এদিকে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে জানান বোর্ড মহাপরিচালক। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ছেলের ফলাফল নিয়ে তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-বেফাক এর মহাপরিচালক যোবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, “সব অভিযোগ ভাল করে দেখে দেখার পর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে –আপনি কি এগুলো করেছেন বলে স্বীকার করেন? তিনি সোজা বলেছেন- আমি এগুলো করেছি। পরে তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে।”