
অনেকেই ঘন ঘন মাথাব্যথায় ভোগেন আর একে সাধারণ ব্যথা ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় আমরা না জেনেই মাইগ্রেনে আক্রান্ত হই। সময়মতো বুঝতে না পারলে এই তীব্র ব্যথা দৈনন্দিন কাজ থামিয়ে দেয়, জীবনমান নষ্ট করে। তাই মাথাব্যথা আসলেই মাইগ্রেন কি না, সেটি চেনা খুব জরুরি। নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো, যা দেখা গেলে আপনার মাথাব্যথাটি মাইগ্রেন হতে পারে।
মাইগ্রেন অ্যাটাকের ৮টি লক্ষণ
১. থ্রবিং
মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার মতো নয়। এটি হৃৎস্পন্দন সঙ্গে তাল মেলানো ধুকপুক বা থ্রবিং করে হয় যা ধীরে ধীরে মধ্যম ব্যথা থেকে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছায়। সামান্য হাঁটা, নিচু হওয়া বা নড়াচড়া করলেই ব্যথা বেড়ে যায়।
২. মাথার এক পাশে ব্যথা
সাধারণত ব্যথা মাথার এক পাশে কপালে, কানের পাশে বা চোখের পিছনে শুরু হয়। পরে অন্য দিকে ছড়াতে পারে। টেনশন হেডেকের মতো দুই পাশে চাপ অনুভব না হয়ে একদিকে তীব্র ব্যথা হয়।
৩. ব্যথা ৪–৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হওয়া
সাধারণ মাথাব্যথা বেশিক্ষণ থাকে না। কিন্তু মাইগ্রেন ৪ ঘণ্টা থেকে টানা তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়, আর অনেকে ঘুম ছাড়া কোনো স্বস্তি পান না।
৪. বমিভাব বা বমি
মাইগ্রেনে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বমিভাব বা বমি করেন। পেট খারাপ, খেতে না ইচ্ছা করা, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এসব লক্ষণও দেখা যায়। এ ধরনের লক্ষণ সাধারণ মাথাব্যথায় সাধারণত দেখা যায় না।
৫. আলো ও শব্দে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
উজ্জ্বল আলো, জোরে শব্দ বা তীব্র গন্ধ সবকিছুই অসহ্য লাগে। মাইগ্রেনে মস্তিষ্কের স্নায়ু এতটাই সংবেদনশীল হয়ে যায় যে স্বাভাবিক আলো বা শব্দও ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
৬. ব্যথার আগে ‘অরা’ দেখা দেয়া
মাইগ্রেনের ২৫–৩০ শতাংশ রোগী ব্যথা শুরুর আগে চোখে ঝিলমিল আলো, জিগজ্যাগ লাইন, ওয়েভি ভিশন বা ব্লাইন্ড স্পট দেখতে পান। কারও হাত-পা অবশ লাগতে পারে বা কথা জড়াতে পারে। এগুলো মাইগ্রেনের স্পষ্ট সতর্কবার্তা।
৭. ব্যথার ২৪–৪৮ ঘণ্টা আগে প্রড্রোম লক্ষণ
মাইগ্রেনের ১–২ দিন আগে কিছু অদ্ভুত সংকেত দেখা দেয়। যেগুলো হলো:
বারবার হাই আসা
মিষ্টি খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা
মুড সুইং
প্রচুর পানি পিপাসা
ঘন ঘন প্রস্রাব
এসব সাধারণ মাথাব্যথার আগে হয় না। এগুলো মাইগ্রেনের প্রাথমিক ইঙ্গিত।
শীতের সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা অনেকের জন্যই কষ্টকর। আবার অনেকেই ভাবে
৮. ব্যথার পরে ‘মাইগ্রেন হ্যাংওভার’
ব্যথা কমলেও ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, মনোযোগ কমে যাওয়া বা ঘাড়ে টান এসব টানা ২৪–৪৮ ঘণ্টা থাকে। আলো বা শব্দে হালকা অস্বস্তিও থাকতে পারে। এটিকে ‘পোস্টড্রোম’ ধাপ বলা হয়।
মাইগ্রেন শুধু একটি মাথাব্যথা নয় এটি একটি স্নায়বিক অবস্থা, যা জীবনের প্রতিদিনের কাজকর্মকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মাথাব্যথা হলে উপরের লক্ষণগুলো খেয়াল করুন। লক্ষণগুলো মিলে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক জীবনযাপন মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে।

