হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী মোহাম্মদ তমিজ উদ্দিন রাজপথে থেকে দমন-নিপীড়নের শিকার হন। গত ১৫ বছরে রাজপথে থেকে কারাগার পর্যন্ত ছিল তার সগ্রামী জীবন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ত্যাগ, নির্যাতন ও প্রতিরোধের অন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । এই ছাত্রদল কর্মী গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গঠনের পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় শুরু হয় হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে। তখন থেকেই ছাত্রনেতা হিসেবে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তমিজ উদ্দিন।

আন্দোলন সংগ্রাম করতেই তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় দুই ডজনেরও বেশি মামলা।মশাল মিছিল, অবরোধ, হরতাল, ছাত্র অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ বিএনপির দুর্দিনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ছাত্রদলকে পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।

রাজনৈতিক নির্যাতন ও হামলার কারণে দীর্ঘ সময় নিজ এলাকায় অবস্থান করতে পারেননি। পরিবারের ওপর চাপ, বাড়িতে পুলিশি তৎপরতা, প্রশাসনের হুমকি, সবকিছু মোকাবিলা করেছেন পালিয়ে, গোপনে, আবার কখনো কারাগারের অন্ধকার সেলে থেকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে তার বিরুদ্ধে নতুনভাবে ধারাবাহিক মামলা হয়। এরপর নিখোঁজ হন তিনি। জীবিত নাকি মৃত জানে না পরিবার।

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’-এর ব্যানারে যুক্ত হয়ে অংশ নেন শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে। টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও গুলির মুখে থেকেও সহযোদ্ধাদের মনোবল ধরে রেখেছেন সামনে থেকে।

জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিকগণ-অভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা। বাইপাইল মোড়, সাভার পাকিজা মোড়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট ও শহীদ মিনার এলাকায় হাজারো মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তোলেন।সবশেষ ৪ আগস্ট এই ছাত্রদল কর্মী প্রায় আট হাজার মানুষকে একত্রিত করে রাজপথে নেতৃত্ব দেন।

স্বৈরাচার সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২১টি মিথ্যা মামলা দায়ের হয়।২০২১ সালে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। দুই দিন আটক রেখে পরে শাহবাগ থানার গারদে পাঠানো হয়, সেখান থেকে কারাগারে।

১৫ বছরের লড়াইকে দেখেন সংগ্রাম, ত্যাগ ও গণতন্ত্রের প্রতি অটল আস্থার ইতিহাস হিসেবে।

তমিজ উদ্দিন বলেন,‘কারাগারে থেকেও আমি বিশ্বাস হারাইনি, রাজপথে আহত হয়েও আমি থামিনি, আওয়ামী প্রশাসনের নির্যাতনেও আমি ভেঙে পড়িনি।’

তিনি বলেন, আমার চোখের সামনে রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের নির্যাতন,জুলাই আন্দোলনে সহযোদ্ধাদের রক্ত এবং ১৫ বছর পরিবারের চোখের অশ্রু আমায় আরও শক্তিশালী করে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মই আওয়ামী স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারবে। আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা তারেক রহমান নির্দেশে রাজপথে ছিলাম এবং গণতন্ত্র পুনর্গঠনের আন্দোলন সফল করেছি। প্রয়োজনে দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও পিচ পা হবো না।’