বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নে ঘাট থাকলেও নদী পারাপারে ব্রীজ নেই। নৌকাই একমাত্র ভরসা, অত্র ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের যোগযোগের মাধ্যম হিসেবে। সুঘাট ইউনিয়নকে দু’ভাগে ভাগ করে রেখেছে বাঙালী নদী, আর সেই নদীর উপর দীর্ঘ দিন ধরে ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ার কারণে সুঘাট বাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদী পারাপারের কাজ করছেন মাঝি সুধির চন্দ্র বাদ্যকার (৬০)। গত ৩ বছর ধরে তিনি এ ইউনিয়নের মানুষকে নদী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দৈনিক প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষকে নদী পারাপার করে থাকেন তিনি। তার সাথে কথা বললে তিনি হতাশ সূরে বলেন স্বাধীনতার পর থেকে শুধু মাপ-যোগই হয়, ব্রীজ আর হইবো বলে মনে হয় না।
ইউনিয়নের মধ্যভাগ গ্রামের আকবর আলী বলেন, সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এই বাঙালী নদীর উপর একটি ব্রীজ আমাদের দীর্ঘ দিনের আশা। ব্রীজ না থাকার কারণে আমাদের যোগাযোগের এতোটাই সমস্যা যে ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সর্ব প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
চরকল্যানীর বাবলু সরকার বলেন, ব্রীজ না থাকায় শুধু বর্ষাকালে নয় সারা বছরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বাঙালী নদী পারাপারে নৌকাই আমাদের একমাত্র ভরসা।
সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে মোট জন সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮৪৭ জন। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল, এছাড়াও জেলে সম্প্রদায়, কুটির শিল্প, হস্ত চালিত শিল্প, বাঁশ শিল্প, সরকারী-বেসরকারী চাকুরিজীবী, ব্যবসাসহ নানা কাজে নিয়োজিত। এ ছাড়াও এ অঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবারের মানুষ বিদেশে থাকেন।
এই ইউনিয়নে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মিলে মোট ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মোট জনগোষ্ঠির শিক্ষার হার প্রায় ৬০%। এছাড়াও হাট-বাজার রয়েছে ৯টি। সুঘাট ইউনিয়নের ঘাট পারের নৌকাটি ইউনিয়ন পরিষদের তত্বাধানে দেয় কিন্তু কোন ডাক হয় না। ইউনিয়ন পরিষদ কোন অর্থ নেয় না। বর্তমানে যে মাঝি রয়েছে সে দৈনিক যা আয় করে সে তা পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়ে নেয়। এছাড়াও বছরের শেষে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ধান, চাল উত্তোলন করে নেয়।
সুঘাট ইউনিয়ন সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র জনগণের অসুবিধার কারণে গত ৪ বছর ধরে ঘাটের কোন ডাক হয়না। ব্রীজ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এই এলাকার লোকজনের নেতৃত্বের অভাব আছে। সঠিকভাবে বিষয়টি উদ্বর্ধতন মহলে তুলে ধরা, এই বিষয়ে একটু ঘাটতি আছে।
সুঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবু সাইদ ব্রীজ প্রসঙ্গে বলেন, এই ব্রীজ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই মাপযোগসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা হয়ে গেছে। এছাড়াও আমি বিভিন্ন সময়ে এমপি সাহেবের সাথে কথা বলে জেনেছি একনেক বৈঠকে ব্রীজটি নির্মাণের অনুমোদনও মিলেছে।
সুঘাট ব্রীজ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী নূর মোহাম্মাদ বলেন, আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা এখনো স্টাডি চলছে।