লাইফস্টাইল: স্কুল হোক বা বাড়ি, অনেক শিশুরই নিজের জিনিস যত্ন করে রাখার অভ্যাস থাকে না। এই অগোছালো স্বভাবের কারণে প্রয়োজনের সময় তারা কোনো কিছু খুঁজে না পেয়ে চেঁচামিচি শুরু করে। তাই প্রত্যেক শিশুকেই সংগঠিত বা গোছানো হতে শেখানো উচিত। এতে তার চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন হবে এবং জীবন সহজ হয়ে আসবে। শিশুদের কীভাবে সংগঠিত হতে শেখাবেন, তার কিছু টিপস তুলে ধরা হলো-

১. কাজ ভাগ করে দিন
শিশুর স্কুলের প্রজেক্ট বা হোমওয়ার্ক ছোট ও সহজ আকারে ভাগ করে দিন। এটি তাদের দেখাবে যে প্রতিটি প্রকল্পের একটি শুরু, মধ্য এবং শেষ রয়েছে, যা কাজকে সহজে শেষ করতে সহায়তা করে।

২. তাদের হাতে চেকলিস্ট ধরিয়ে দিন
সারাদিন কোন কোন কাজ করতে হবে, কখন কী কাজ করতে হবে তা শিশুরা অনেক সময় মনে রাখতে পারে না। তাই দিনের শুরুতে তাদের একটি চেকলিস্ট দিয়ে দিন। কোনো কাজে আগে বা পরে করা উচিত, তা-ও জানিয়ে দিন। শিশুকে বলুন, এক একটি কাজ শেষ হয়ে গেলে সেই তালিকায় টিক চিহ্ন দিয়ে দিতে।

৩. ক্যালেন্ডার এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা শেখান
শুধু জিনিস সঠিক স্থানে রাখাই অর্গানাইজ হওয়া নয়, বরং সময়ের মধ্যে কাজ করা, সময় মেনে চলাও জরুরি। তাই শিশুকে একটি ক্যালেন্ডারে তার কাজগুলো লিখে রাখতে ও প্রতিটা কাজের সময়ের সামঞ্জস্য করতে শেখান। এটি শিশুকে স্কুল অ্যাসাইনমেন্টসহ অন্যান্য কাজ নির্ধারিত তারিখে কমপ্লিট করতে সাহায্য করবে।

৪. দৈনন্দিন কাজকর্মের রুটিন করে দিন
শিশুর জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়াসহ সারাদিন কী করবে তার জন্য সময়সূচি তৈরি করুন। সময়সূচিটি এমন জায়গায় রাখুন যাতে শিশু সবসময় এটি দেখতে পায়।

৫. জরুরি কাগজপত্র যত্নে রাখতে শেখান
পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাগজপত্র বা স্কুল থেকে দেওয়া কোনো কাগজ নানান স্থানে রেখে দেয় শিশুরা। এতে ওই কাগজপত্র হারিয়ে যেতে পারে। তাই ট্রান্সপারেন্ট ফোল্ডার দিন শিশুকে। সেই ফোল্ডারের মধ্যেই সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখতে শেখান। এ ভাবে অল্প বয়স থেকেই শিশু কাগজপত্র যত্নে রাখার প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে।

৬. রঙ-কোডিং ব্যবহার করুন
স্কুলের প্রতিটি বিষয়ের জন্য রং বরাদ্দ করুন। উদাহরণস্বরূপ, সবুজ ফোল্ডার ইংরেজির জন্য এবং নীল গণিতের জন্য হতে পারে। এছাড়া শিশুকে বিভিন্ন রঙের কলম ব্যবহার করার পরামর্শ দিন।

৭. মজার ছলে তথ্য মনে রাখার পদ্ধতি দেখান
তথ্য মনে রাখার জন্য কীভাবে বাক্য, গান, সংক্ষিপ্ত শব্দ বা কার্টুন তৈরি করতে হয় সেসব দেখান শিশুকে। যেমন ‘Never Eat Soggy Waffles’ এর মতো বেশ অনেক ভিডিও রয়েছে যেগুলো সহজে শিশুকে উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকসহ নানা বিষয় মনে রাখতে সহায়তা করে।

৮. সংগঠিত কাজের স্থান তৈরি করে দিন
বাড়িতে এমন জায়গা রাখুন যেখানে প্রতিটি শিশু বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে। সেইসাথে শিশুর স্কুলের জিনিসপত্র এবং প্রযুক্তি যেমন ক্যালকুলেটর, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কাছাকাছি রাখুন।

৯. নিয়মিত ব্যাকপ্যাক অডিট করুন
শিশুর ব্যাকপ্যাক হলো বাড়ি এবং স্কুলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র, তাই এটি পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শিশুর ব্যাকপ্যাক গুছানো ও সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখুন।

১০. এক দিন আগেই পরিকল্পনা তৈরি করতে শেখান
পরের দিন তাড়াহুড়ো কাজ করার চেয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সব পরিকল্পনা তৈরি করে রাখতে বলুন শিশুকে। আগে পরিকল্পনা না করলে কোনো কাজই ঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় না। এমনকি কাজের গুণাগুণও ভালো হয় না। তাই এক দিন আগে নিশ্চিন্ত মনে সমস্ত পরিকল্পনা করে রাখতে বলুন।

তবে মনে রাখবেন, শিশুকে কাজ করতে বললেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। সে সময় অবশ্যই তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন। কোনোকিছু শিখতে তার সময় লাগবে। সেই সময়টা তাকে দিন। মনে রাখবেন, যে শিশু যতটা সংগঠিত সে শিশুর জীবন ততটা সুন্দর।