পর্ব:১
————————
নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর ৫ টি মহাল থেকে উন্নতমানের বালু ও নুড়ি বালু উত্তোলিত হয় । এগুলোকে ২.৫ থেকে ৩.৫ সিলেকশন বালু বলে ।
চলতি ১৪২৭ বাংলা ইজারা সনে এখান থেকে সরকার রাজস্ব, ভ্যাট ও উৎেস কর থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় করছে । মহালগুলো সৃজন হয় ১৪১৮ বাংলা সনে তখন এগুলোর ইজারামূল্য ছিল সর্বমোট মাত্র ১৪ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা । এই বালুমহালগুলো থেকে বিগত বছরের চেয়ে এ বছর ৭ গুণ থেকে ১২ গুন পর্যন্ত অধিক রাজস্ব আদায়ের ফলে সরকারের স্বার্থ অনেক বেশি রক্ষিত হয়েছে ।
লক্ষ্যনীয় বিষয়: জানা গেছে, নতুন চুক্তিপত্র অনুযায়ী বালু ও নুড়ি বালুর দাম বাড়ানোর অবাধ সুযোগ থাকা সত্বেও ইজারাদাররা মূল্য বাড়ায়নি ।ফলে সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে না তবে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না ।
ইজারাদারদের বক্তব্য অনুযায়ী মহামারি কভিড ১৯ করোনা সংক্রমনের সময়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত । ইজারাদাররা কাঙ্খিত খাজনার ৪ ভাগের ১ ভাগও পাচ্ছে না । জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে ইজারাদাররা আর্থিক চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন । ফলে আগামী ইজারা সনে ইজারা ডাকের নীতিমালা অনুযায়ী একাধিক ও ততোধিকবার টেন্ডার আহবান করলেও সরকার কাঙ্খিত ইজারামূল্য পাবে না । ফলে দূর্গাপুর রাজস্ব জোন থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার ।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার যেন মহালের আগামী টেন্ডারে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় করতে পারে অর্থাৎ সরকার যাতে অধিকতর রাজস্ব পায় তার জন্য ব্যবসায়ীরা যেন আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্যে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত না দিয়ে ব্যবসাবান্ধব পদক্ষেপ নেয়ার যৌক্তিকতা কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা ।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলো থেকে আমাদের কাছে বালু ও নুড়ি বালুর ব্যাপক চাহিদার কথা জানাচ্ছেন ।কিন্তু পর্যাপ্ত উত্তোলন না থাকায় এবং যান চলাচলে বিচ্ছিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করতে পারছি না ।
তাছাড়া দূর্গাপুর তো মহানগর নয় – এই জায়গা রেভিনিউ জোন – এইসমস্ত এলাকায় এ ধরনের বাধা নিষেধ থাকে না ।এতে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
দূর্গাপুর পৌরবাসীর সুবিধার্থে শুষ্কমৌসুমে নদীপথে এক মহাল থেকে আরেক মহালের যান চলাচল চুক্তিপত্রের শর্ত অনুসারে অবাধ ও নিশ্চিত করা আছে । সেই ডাইভারশনগুলো সুরক্ষিত রাখা প্রশাসনের দায়িত্বে বর্তায় । জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার্থে মহাল সৃজনের পর থেকে শ্বশানখলা বেড়িবাধের পাশ দিয়ে যেপথে মানুষ চলাচল করে না সেপথে পরিবহনগুলো উঠানামা করতো । ফলে ঐ স্থানে যানজট থাকতো না । সেটি ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা অনুমতি দেয়া হচ্ছে না বিশেষ মহলের মন রক্ষায় ! অথচ ব্লক ঘেষে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ফলে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে সেদিকে বারবার নজর দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি !
অবৈধ সমিতির নামে রাস্তায় আকস্মিক ছোট ট্রাক আটক করে কিছু দুর্বৃত্ত । এদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করা হয় এখানেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি । এখানে অবশ্য ইউএনও নির্ধারিত সময়ের বাইরে লড়ি চলাচল করলে মোবাইল কোর্ট করেন ।
উত্তর নেত্রকোনার জনগনের বহুল প্রত্যাশিত ২০১৩ সালে অনুমোদিত হওয়া শ্যামগঞ্জ – দূর্গাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক কিছু দিন পূর্বে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অথচ এই সড়কে নিম্নমানের কাজের কারণে এখনি বিভিন্নস্থানে খারাপ অবস্থা দৃশ্যমান – কার্যত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানা যায়নি । দূর্গাপুর ও কলমাকান্দার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেন ।
সোমেশ্বরীর ব্রীজ দূর্গাপুর শহরের সাথে সংযোগকারী একমাত্র ব্রীজে ভাঙন , আত্রাখালী যাওয়ার পথে কালভার্টে ফাটল , জারিয়া আনসার ক্যাম্পের সন্নিকটে মূল সড়কে কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে , তেরীবাজার ঘাট থেকে নাজিরপুর মোড় সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত ,দূ্র্গাপুর নাজিরপুর মোড় হইতে নাজিরপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুরাবস্তার কারনে জনগনের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। টেকসই কাজ না করার কারনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইউএনওর কাছে বারবার দাবী জানিয়েও সুরাহা হয় নাই ।
ইজারাদারগণ বলেন , বিগত সময়ে বালু সংক্রান্ত সভায় তাদের বক্তব্যের অধিকাংশ রেজুলেশনে আসে না, সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না, কাটছাঁট করা হয় । ফলে তাদেরকে সভায় ডেকে সুফলতা দেখা যায় না ।
তারা আরো জানান, ৫ টার পূর্বে বড় ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা হবে টেন্ডার শর্তাবলী ও চুক্তিপত্র বহির্ভূত ।
কুফলে ইজারামূল্যের অর্ধেক টাকাও আসবে না ।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে সময় নির্ধারিত করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল ।উল্লেখ্য করোনা সংক্রমনের কারনে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী করোনা সংকট উত্তরনে দেশব্যাপী জীবন ও জীবিকা পাশাপাশি চলবে ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন । এই ঘোষণার সুফলে এই সেক্টরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশীদার হাজার হাজার মেহনতি শ্রমিক হাজারো ব্যবসায়ীর জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম হয়েছে ।