ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী বছরের পর বছর ধরে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার মরণকামড় দিয়েছে তারা, গাজায় প্রতিদিনই বড় হচ্ছে লাশের মিছিল। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। গাজার অধিবাসীদের জন্য বিশ্ববাসীর হৃদয় পুড়ছে। তাই গাজায় এমন মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিবাদে পুরো বিশ্ববাসীকে আজ কর্মবিরতি পালনের আহ্বান করা হয়েছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশের মানুষও সেই প্রতিবাদের মিছিলে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়াও বাদ যাচ্ছেন না ক্রীড়াঙ্গনের তারকারাও। জামাল ভূঁইয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের তারকা খেলোয়াড়রাও বার্তা পাঠাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে।

গাজাবাসীর এমন দিনে আবারও মনে পড়ছে ফুটবল কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা। যার হৃদয়ে ছিল ফিলিস্তিন। যিনি নিজেকে গর্ব করে প্যালেস্টেনিয়ান পরিচয় দিতেন। ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর বলা যায় আর্জেন্টিনার প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তীকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজারিরার এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার মস্কোতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ম্যারাডোনা। যেখানে তিনি আব্বাসকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, আমার হৃদয়ে, আমি প্যালেস্টাইন, এবং সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও তার ইনস্টাগ্রাম পেজে আপলোড করা হয়।

২০১২ সালে নিজেকে প্যালেস্টাইন জনগণের সবচেয়ে বড় ভক্ত বলে বর্ণনা করেছিলেন ম্যারাডোনা। তিনি বলেছিলেন, আমি তাদের শ্রদ্ধা করি এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করি। আমি কোনো ভয় ছাড়া প্যালেস্টাইনকে সমর্থন করি।

এর দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দখলদার ইসরায়েল। যাতে অন্তত তিন হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। এ ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন ম্যারাডোনা। ইসরায়েলের সমালোচনা করেন।

এক বিবৃতিতে সে সময় তিনি বলছিলেন, ‘ইসরায়েল প্যালেস্টাইনদের সঙ্গে যা করছে, তা লজ্জাজনক’। এ ছাড়াও একবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, ২০১৫ সালে এএফসি এশীয় কাপের সময় ফিলিস্তিনি জাতীয় দলকে প্রশিক্ষণ দিতে ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন ম্যারাডোনা।

তাই ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছিল ফিলিস্তিনের বুকেও। হামাসের তৎকালীন মুখপাত্র সামি আবু জুহরি এক টুইটবার্তায় ম্যারাডোনার পরিবার এবং বিশ্বজুড়ে তার অগুণিত ভক্ত-সমর্থকের প্রতি শোক প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, ‘ম্যারাডোনা’র মৃত্যুতে, যিনি প্যালেস্টাইন বিষয়ক আন্দোলনের জন্য পরিচিত।’

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হওয়ার সময় মারা যান ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কোকেইন ও অ্যালকোহল আসক্তির দীর্ঘদিন ধরেই নানান সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু সেই লড়াই শেষ না হতেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে থেমে যায় এ ফুটবল কিংবদন্তির জীবন।