ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বৈরাচার পতনের পর নতুন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার দুই মাস পার করেছে। তবে এ দুই মাসে দেশের বাজারে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা-বেচা কমে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচার শাসনের অবসানের পর বিলাসবহুল সেডান ও স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল কেনা-বেচা কমে নেমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশে। টয়োটার ল্যান্ড ক্রুজার, পাজেরো ও হ্যারিয়ার সিরিজের গাড়িও বিক্রি নেই। যদিও ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি মাসে ৮০০-র মতো গাড়ি কেনাবেচার রেকর্ড ছিল দেশে।
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকে একটি গাড়িও বিক্রি হয়নি প্রোগ্রেস মোটরস’র। এতে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বলে জানান রাজধানী তেজগাঁওয়ের প্রোগ্রেস মোটরস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ নুসরাত খান।
তিনি জানান, দেশে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ধীরগতি আসায় বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে অনেকে এতো টাকা খরচ করার অবস্থায় নেই। রাজনৈতিক পালাবদলে অর্থনীতি নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। গত জুলাই থেকে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি অনেক কমেছে দেশে।
অন্য আরেক গাড়ি ব্যবসা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা কল্পনাও করেননি যে হঠাৎ করে বাজারে এতটা মন্দা দেখা দেবে। তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দামি গাড়ির ক্রেতা হয়ত পাওয়া যাবে না।
এদিকে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে , চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ৭৩৪টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে সারা দেশে। যার মধ্যে সাধারণ গাড়ি হিসেবে সেডান গাড়ি গণ্য করায় অন্যান্য দামি গাড়ির নিবন্ধনের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান নেই। এছাড়াও, নতুন গাড়ি নিবন্ধনে দেরি করা ব্যক্তিরা এসব পরিসংখ্যানে বাদ পড়েন।
দেশের মাটিতে হঠাৎ বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি থমকে যাওয়ার কারণ উল্লেখ্য করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় দামি গাড়ির দাম আরও বেড়েছে। ফলে গত দুই মাসে এসব গাড়ির দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বেড়েছে।
হাবিব উল্লাহ ডনের ভাষ্য, এটি সুখবর যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন ভালো হচ্ছে। আগামীতে ক্রেতারা শোরুমে আসতে আরও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। তবে তিনি দেশের দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।