দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম দিনে ৭টি ট্রাকে ২৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে। ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১০ মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার যশোরের বড় বাজার মাছের আড়তে পাইকারিতে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশ ৪৭০ টাকা কমে ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ইলিশ দুই হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মানে হচ্ছে, ভারতে যে দামে রপ্তানি করা হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ক্রেতাদের।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা দিতে পারবেন। তবে আমি যেটা জানি সেটা হলো, ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তখনকার বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখনো সেই পরিপত্র অনুযায়ীই রপ্তানি হচ্ছে। তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে।

যশোর শহরের বড় বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়, সেখানে ভারতে ১০ ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ বৃহস্পতিবার দেড় হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, বিকেল ৫টা পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭টি ট্রাকে করে ২৫ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে ২ হাজার ৪০০ টনের কিছু বেশি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে। তবে রপ্তানিকারকদের আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়েছিল। পরে আবার রপ্তানি শুরু হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় শুধু দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে।

এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথমে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরে তা থেকে সরে আসে সরকার। তিন হাজার টনের পরিবর্তে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের প্রধান নিয়ন্ত্রককে চিঠি দিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ২ হাজার ৪০০ টন, আর একটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে।

ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আরিফ সি ফুডস, জারা এন্টারপ্রাইজ, সততা ফিশ ফিড, এস এ আর এন্টারপ্রাইজ, নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, রুপালী সি ফুডস লিমিটেড, লাকি এন্টারপ্রাইজ, টাইগার ট্রেডিং, রিপা এন্টারপ্রাইজ, জেবিএস ফুড প্রোডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মাশফি অ্যান্ড ব্রাদার্স, মহিমা এন্টারপ্রাইজ, সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং কোম্পানি লিমিটেড, রহমান ইমপেক্স, আসিফ ইমপেক্স, নোমান এন্টারপ্রাইজ, যমুনা অ্যাগ্রো ফিশারিজ, রুপালী ট্রেডিং করপোরেশন, সততা ফিশ, প্যাসিফিক সি ফুডস লিমিটেড, জেজে ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাপিটাল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট অ্যান্ড কোম্পানি, অর্পিতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সুমন ট্রেডার্স, সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, সততা ফিশ, আঁচল এন্টারপ্রাইজ, ২ এইচ ইন্টারন্যাশনাল, এমএপি ইন্টারন্যাশনাল, সরদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট, ইউভা ট্রেডিং, ফারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, আসফা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যান্ডার্ড ফুড করপোরেশন, জেএস এন্টারপ্রাইজ, পদ্মা অ্যাগ্রো ফিশারিজ, ন্যাশনাল অ্যাগ্রো ফিশারিজ, মেসার্স আহনাফ ট্রেডিং, নাফিজা এন্টারপ্রাইজ, ডিপ সি ফিশারিজ লিমিটেড, মাসুদ ফিশ প্রসেসিং, আরকে ট্রেডার্স, বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজ, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ ও লোকজ ফ্যাশন।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লোকজ ফ্যাশন ২০ টন, আর বাকি সবকটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে।