স্বাস্থ্য ডেস্ক: অজানা এক ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান। আর হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা।
বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে কর্মস্থলে আসেননি বহির্বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে ২০ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া আন্তঃবিভাগে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, কনসালট্যান্টস আরও ২১ চিকিৎসকের দেখা নেই। এতে পুরো হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বাগেরহাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কুলসুম বেগম বলেন, ব্রেস্ট টিউমার নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কাউন্টারে টিকিট কেটে নির্ধারিত কক্ষে এসে দেখি ডাক্তার নেই। এখন ফেরত যেতে হবে। কবে এ অবস্থা ঠিক হবে জানি না।
এসব বিষয়ে খুমেকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এবং আরএস কেউ কর্মস্থলে না থাকায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুর্শিদ বলেন, হাসপাতাল সরাসরি আমাদের অধীনে না। তারপরও আমি বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের চাপে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান পদত্যাগ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মেডিকেল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ৪১ জন চিকিৎসক একটি তালিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এতে আতঙ্কে ভয়ে দুটি কাগজেই স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামান। এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন।
উপপরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, জীবনে কেউ আমাকে আওয়ামী লীগ ও স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি কোনো দিন দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি কোনো দিন সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো দিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন কোনো রেকর্ড নেই। বরং আমাকে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। এতকিছুর পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করতে সুযোগ পাব; কিন্তু আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হলো। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।
খুলনা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেছেন, স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল এমন অভিযোগে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পদত্যাগ করিয়েছেন এমন কোনো বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অবগত নন।
ডা. মোস্তফা কামালকে তার মোবাইল নম্বরে বারবার কল এবং তার হয়্যাটসআপ নম্বরে ম্যাসেজ এবং কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। ম্যাসেজ এর রিপ্লাইও দেয়নি।
বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ ফারক হোসেন বলেন, হাসপাতালের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, দলীয় নির্দেশনায় আমরা এখানে আসছি যারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তারা বিএনপি’র কেউ নয়।
বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, পুরনো সেই দূর্বৃত্তরাও নতুনভাবে আসছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও বিএনপির সহযোগিতায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও দু-একদিনের ভিতরে স্বাভাবিক গতি পাবে।
বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি সফিকুল আলম মনা বলেন, বিএনপি এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনার দায়ভার নিবেনা খুলনা মহানগর বিএনপি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনায়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো চিকিৎসককে পদত্যাগ বা অবাঞ্চিত করার বিষয়টাকে সমর্থন করি না। যদি সরিয়ে দিতে হয় ধাপে ধাপে সরিয়ে দেওয়া যাবে, হুট করেই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে খুলনাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত করতে চাই না।