পর্যটন ও রাজস্ব জোন হিসেবে খ্যাত উত্তর নেত্রকোনার দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলা । ছয় বছর যাবত ঠাকুরাকোনা- কলমাকান্দা সড়কের বেহাল অবস্থা অথচ ২০১০ সালে এই সড়ক প্রশস্ত করে বেইলী ব্রীজগুলোর স্থলে আরসিসি গার্ডার নির্মানসহ জেলা মহাসড়ক প্রকল্পের ডিপিপি তৈরীর কাজ শুরু হয় । বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার সময় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে দ্রুত একনেকে অনুমোদন দেন । পরে অন্যান্য প্রক্রিয়া কচ্ছপ গতিতে আপনাআপনি সম্পন্ন হয়ে আজ পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত হয়নি ।

আত্রাখালী কালভার্টে ফাটল
এলজিইডির প্রকল্পের অধীন দেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে কলমাকান্দা – দূর্গাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয় । এই সড়কের দূ্র্গাপুর নাজিরপুর মোড় হইতে নাজিরপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুরাবস্থার কারনে জনগনের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।
জনগনের বহুল প্রত্যাশিত ২০১৩ সালে অনুমোদিত হওয়া শ্যামগঞ্জ – দূর্গাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক কিছু দিন পূর্বে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অথচ এই সড়কে নিম্নমানের কাজের কারণে এখনি বিভিন্নস্থানে খারাপ অবস্থা দৃশ্যমান – নির্মান হতে না হতেই জারিয়া আনসার ক্যাম্পের সামনে কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে । কার্যত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানা যায়নি । দূর্গাপুর ও কলমাকান্দার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন ।

দূর্গাপুর – নাজিরপুর সড়ক।
দূর্গাপুর – কলমাকান্দা অংশের সীমান্ত সড়ক সোমেশ্বরী ও গনেশ্বরী ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও ছোট বড় ব্রীজ কালভার্ট সহ রাস্তা নির্মাণের ডিপিপি তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ২০১২ সালে একনেকে অনুমোদিত হয় । এই প্রকল্পও কিছু ব্রীজ , কালভার্ট , আংশিক রাস্তার কাজ ছাড়া কিছুই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ।
এই প্রকল্পের আওতায় সোমেশ্বরী নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের অগ্রগতির কথা জানতে চাইলে সদ্য যোগদান করা নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুর রহমান কোন তথ্য দিতে পারেননি ।
শ্যামগন্জ – দূর্গাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স রাস্তায় সোমেশ্বরীর ব্রীজ দূর্গাপুর শহরের সাথে সংযোগকারী একমাত্র ব্রীজে ভাঙন , আত্রাখালী যাওয়ার পথে কালভার্টে ফাটল , শ্যামগন্জ – দূর্গাপুর জেলা মহাসড়কের জারিয়া আনসার ক্যাম্পের সন্নিকটে মূল সড়কে কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে , তেরীবাজার ঘাট থেকে নাজিরপুর মোড় সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত টেকসই কাজ না করার কারনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আজ অব্দি জানা যায়নি ।

সোমেশ্বরী ব্রীজে ভাঙ্গন।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর রাস্তা , ব্রীজ , কালভার্ট , ডুবো সড়করে স্কীম অসমাপ্ত হয়ে আছে । কিছু স্কীম শুরুই হয়নি ।
ছয় বছর ধরে ঠাকুরকোনা-কলমাকান্দা সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ
নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরাকোনা থেকে কলমাকান্দা উবধাখালী ব্রীজ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে কাদাপানির সৃষ্টি হয়। আর খড়ার সময় ধুলোয় দুষরিত হয় চারিদিক। খানাখন্দ এ রাস্তায় প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে ঝুকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। জানা গেছে, টানা ছয় বছর ধরে সড়কটির এমন অবস্থা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রতিদিন শতশত পর্যটক কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর বেড়াতে যান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সাল থেকে তৈরী হওয়া ডিপিপির সময়ক্ষেপনে বিরক্ত হয়ে প্রিএকনেক সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত একনেকে ৩১০ কোটি টাকা প্রকল্প মূল্যে যথাযথ মান অনুযায়ী ও প্রশস্ততায় উন্নীত ঠাকুরাকোনা – কলমাকান্দা জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেন। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার দীর্ঘদিন পর কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিন ঢিমেতালে কাজ করে ফেলে রাখায় ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না।

ঠাকুরাকোনা – কলমাকান্দা সড়ক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহন বাবদ বরাদ্দ ১০২ কোটি টাকা । ৩০ ফুট প্রশস্ত করে ২৪ ফুট প্রশস্ত পাকা । দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট মাটি থাকবে । হার্ডশোল্ডারসহ পেভমেন্ট মজবুতিকরণ ও প্রশস্তকরণ , হার্ডশোল্ডারসহ পেভমেন্ট পুন:নির্মান , হার্ডশোল্ডারসহ ব্রীজ এ্যাপ্রোচে নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ , রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ হবে । সবগুলো বেইলী ব্রীজ আরসিসি সেতু ও পিসি গার্ডার সেতু হবে । আরসিসি সেতু ৪ টি ও পিসি গার্ডার সেতু ৭টি , আরসিসি বক্স কালভার্ট ২০ টি নির্মান হবে ।
কলমাকান্দা থেকে ৭ কিলোমিটার দুই পাশেই জিও টেক্সটাইলসহ সিসি ব্লক হবে । গ্রাস টার্ফিং হবে । টো-ওয়াল ও সসার ড্রেন নির্মান হবে । সড়ক বাঁধ নির্মান প্রশ্স্তকরন ও মজবুতী করণ কাজ হবে । প্রকল্পের অংগভিত্তিক অন্যান্য কাজ হবে ।
এতে করে, কলমাকান্দা উপজেলার কৃষিপন্য সহজে পরিবহন হবে এবং কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে । নিরাপদ যাত্রী চলাচলে দূর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাব । আর্থ সামাজিক গুরুত্ব অনুসারে আঞ্চলিক বৈষম্য রোধ হবে এবং কলমাকান্দার জনগনের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে । আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে ।

আনসার ক্যাম্পের সামনে কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় অস্থায়ী ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রীজে যান চলছে।
এ ব্যাপারে সওজের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুর রহমান বলেন, ঠাকুরকোনা-কলমাকান্দা রাস্তার কর্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে ৭টি প্যাকেজের কাজ চলমান, ব্রীজের কাজ চলছে। সম্প্রতি করোনা এবং বন্যার কারণে ধীরগতিতে কার্যক্রম চলেছে। বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় আবার পরিপূর্ণভাবে কাজটি শুরু হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। আমাদের বিভিন্ন সংকট ছিলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো, পাথরের সংকট। বিদেশ থেকে পাথর আসছে না। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুতই আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো। বাকিটা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভর করবে।