ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ তার পশ্চিমা মিত্রদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কারণ মস্কোর বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে ধীর কিন্তু তারা এরই মধ্যে অনেক অঞ্চল দখল করেছে।

আল জাজিরার কূটনৈতিক সংবাদদাতা জেমস বেস বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্য ইউক্রেনকে সমর্থন করা, বিশেষ করে রাশিয়ার যেসব এলাকা ইউক্রেন দখল করেছে। যেমন, কুরস্ক অঞ্চল।

এদিকে বাইডেন তার ক্ষমতা শেষ হওয়ার মাত্র নয় সপ্তাহ আগে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা করবেন। যা ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা পাঠাতে থাকবে কি না- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং তার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি কিয়েভ সফর করেন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন। পরে জেলেনস্কি তার এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে জানান, এ বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের কথা মনোযোগসহকারে শুনেছেন। আলোচনায় রয়েছে দূরপাল্লার অস্ত্র।

ওই সফরের একদিন আগে ব্লিঙ্কেন লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি এবং ল্যামি এই বিষয়ে ‘খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন’ এবং ফিরে রিপোর্ট করবেন। একই দিনে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা এখনই এ কাজটি করছি।

চলতি বছর এপ্রিলের শেষের দিকে ইউক্রেন রাশিয়ার ক্রিমিয়ায় এ পর্যন্ত দুইবার ব্যবহার করেছে। তবে সেই হামলা ইউক্রেন তৎক্ষণাৎ স্বীকার করেনি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অনুমতি সেই সময় দেয়নি। আর এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র গোপনে চলতি বছর মার্চ মাসে ইউক্রেনে পাঠায়।

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কি? ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র যে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে, এটিকে বলা হয়- আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম। তাদের পরিসীমা ৩০০ কিলোমিটার বা ১৯০ মাইল। এই ক্ষেপণাস্ত্র ১৯৮০ দশকে তৈরি করা হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক লকহিড মার্টিন কোম্পানি এ ক্ষেপনাস্ত্র তৈরী করে।

২০২২ সালের জুলাইয়ের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে পাঠায় হিমারস লঞ্চ সিস্টেম ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে । এছাড়াও যুক্তরাজ্যের ইউক্রেনে পাঠানো মার্কিন-নির্মিত এম২৭০ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের মাধ্যমেও আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা যায়।

কেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ইউক্রেন দূরপাল্লার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে কুরস্কে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। এছাড়া ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভিতরে সামরিক সরঞ্জাম ওপর সহজে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের আশেপাশে কিয়েভ আক্রমণ করতে পারে।

চাথাম হাউসের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ আল জাজিরাকে বলেছেন, এই ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমান ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। ইউক্রেন রাশিয়ার সাপ্লাই চেইনগুলিতে আঘাত করতে সক্ষম হবে। কিয়েভকে দীর্ঘ-পরিসরের ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ‘ভবিষ্যৎ আলোচনায় ইউক্রেনকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে’ হতে পারে। পুতিন ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইতে পারে।

গত ১১ নভেম্বর জেলেনস্কি একটি টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা কুরস্কে প্রায় ৫০ হাজার রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা গত আগস্ট মাসে কুরস্কের প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার দখল করে।

ইউক্রেন এবং রাশিয়া কিভাবে প্রতিক্রিয়া করছে?
জেলেনস্কি রবিবার সন্ধ্যায় একটি ভাষণে বলেন, আজ মিডিয়াতে অনেকেই বলছেন- আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি পেয়েছি। এই ধরনের জিনিস আগে ঘোষণা করা হয় না, ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের পক্ষে কথা বলবে।

এদিকে মস্কো বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রের সিদ্ধান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। রাশিয়ার মুখ্যপাত্র পেসকভ বলেছেন, যদি সত্যিই এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা হয় তাহলে এটি নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে রাশিয়া পদক্ষেপ নিবে।

রাশিয়ান আইনপ্রণেতা মারিয়া বুটিনা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন,এ সিন্ধান্তের কারণে একটি বিশ্ব সংঘাত শুরু হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে। আমি আশা করি, ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তটি কাটিয়ে উঠবেন।

এদিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার জন্য দুই মাস আগে পশ্চিমাদের সতর্ক করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন । তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, যদি এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, আমরা হুমকির বিষয় মাথায় রেখে তার ভিত্তিতে আমরা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেব।