হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা করোনায় থমকে গেছে গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশেও এর থেকে রক্ষা পায়নি। করোনার ভয়াবহ তাণ্ডবে দীর্ঘদিন বন্ধ আছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার প্রভাবে বদলে গেছে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা।
আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কলেজের মর্নিংশিফ্ট এ ক্লাস থাকায় বাধ্য হয়েই প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠতে হতো। যা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ ব্যাগ গুছিয়ে কলেজের ব্যস্ততার শুরু হতো। সমস্ত কাজ করতে হতো টাইম টু টাইম।
একটু সময়ের হেরফের হলেই মাশুল গুনতে হতো এক থেকে দেড় ঘন্টা বাড়তি ট্রাফিকজ্যাম! কলেজবাস মোহাম্মদপুর পর্যন্ত না আসায় মোহাম্মদপুর থেকে কুড়িলবিশ্বরোডগামী বিআরটিসি বাসগুলোই ছিল আমার কলেজ যাওয়ার একমাত্র বাহন। সকাল সাত টা থেকে মোহাম্মদপুরবাসস্টান্ড হতে বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হয়।
সকাল সাত টা থেকে সাড়ে সাত টার মধ্যে বাসে উঠতে পারলে কোনো সিগনাল ছাড়াই নির্বিঘ্নে কলেজে পৌঁছানো যায়। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে যদি সাড়ে সাতটার পরের বাসে উঠি। সেদিন প্রথম দুটি ক্লাস মিস হবেই হবে! হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, সাড়ে সাতটার পরের বাসে মোহাম্মদপুর থেকে আসাদগেট যেতেই যে লাগে আধাঘন্টা!
খামারবাড়ি আর বিজয় স্বরণীর জ্যাম মিলে খোয়া যাবে আরো একঘন্টা! ক্লাস তো মিস হবেই। যেদিন এরকম হয় সেদিন দীর্ঘক্ষণ জ্যামে থাকার পর আর ক্লাসেও মন বসে না।
ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই সিঙ্গারা খাওয়া হতো শাকিল চত্বরের মামার দোকানে। বেলায়েত চত্বর কিংবা ছাত্রলীগ চত্বরেও জমতো বাদামের আড্ডা। মাঝেমধ্যে রাসেল স্যারের ক্লাস মিস দিয়ে বন্ধু রাশেদ সহ মাঠের কোনে বসে যেতাম সুখ-দুঃখের গল্প করতে। রাশেদ আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। আমার জীবনের ভালো-মন্দ গল্প সবটাই সে জানে। আমিও তারটা জানি। এজন্যই ইট-পাথরের ঢাকা শহরে তাকেও আমার পরিবারের একজন বলে মনে হয়।
এখন করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্গত কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো আমাকেও দীর্ঘদিন থেকে বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে। এখন ক্লাসের কোনো ঝামেলা না থাকায় সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার কোনো তাড়া থাকে না। সাড়ে সাতটার বাস মিস করার ভয়টাও আর নেই। কিন্তু তারপরেও আমি ভালো নেই! কেন জানি মনে হচ্ছে ঐ ব্যস্ত জীবনটাই আমার জন্য পারফেক্ট।নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠা,তারাহুরো করে কলেজের প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে।
শুধু এটুকুই নয় ঢাকার রাস্তার বেরসিক ট্রাফিকজ্যামকেও আজ বড্ড আপন মনে হচ্ছে। বিরক্তিকর ট্রাফিকজ্যামকেও এখন ফিরে পেতে মন চাচ্ছে। বাড়িতে মায়ের হাতে হরেক রকমের রান্না খাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমার শাকিল চত্বরের সিঙ্গারা খেতে ইচ্ছে করছে খুব। মেসেঞ্জার বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বন্ধুদের সাথে আড্ডা হচ্ছে ঠিকি কিন্তু সেটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই মনে হচ্ছে।
আমার মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসের সেই সবুজ গালিচার আড্ডায়,বেলায়েত চত্বরে বাদাম খেতে খেতে বন্ধুদের আড্ডায়।গত পরশু রাশেদও ফোন দিয়ে বললো বন্ধু এভাবে আর ভাল্লাগে না রে,কবে ফিরবো ক্যাম্পাসে? আমিও ভাবছি কবে ফিরবো চিরচেনা সেই শহরে? আমাদের এই অপেক্ষা কবে ফুরোবে?
শিক্ষার্থীঃ সরকারি তিতুমীর কলেজ,ঢাকা