বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় রেকর্ড ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৮৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৭৪৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত এক দিনে নতুন ও পুরনোসহ মোট ১৩ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে এই ফল পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন।
গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত এক দিনে যে ৪২ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে ৩০ জন হাসপাতালে এবং ১২ জনের বাড়িতে মৃত্যু হয়। বয়সের ভিত্তিতে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। স্থানের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আটজন, সিলেট বিভাগে দুজন, রাজশাহীতে দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন এবং খুলনা বিভাগে দুজন রয়েছেন। দেশের ৫৫টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালু থাকলেও গতকাল ৫২টি ল্যাবরেটরির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয় জানিয়ে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৭টি। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। এই পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৯০৩ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন তার সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ১৫৬ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৬৭ জনে। শনিবার চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ও কক্সাবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করা নমুনা পরীক্ষায় এ ফলাফল পাওয়া গেছে। জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী জানান, এসব ল্যাবে মোট ৫২৩টি নমুনা পরীক্ষা করে চট্টগ্রামের ১৫৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। বিআইটিআইডি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয় ২৩৬টি। এতে পজিটিভ পাওয়া গেছে ৫২ জনের। চট্টগ্রাম মেডিকেল ল্যাবে এদিন ১১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সিভাসু ল্যাবে শনিবার পরীক্ষা হয় ১৫৬টি নমুনা। এতে পজিটিভ এসেছে ৬৫ জনের। অপরদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে দুজনের মধ্যে করোনাভাইরাস পজিটিভ মিলেছে। কুমিল্লা : জেলায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন এক হাজার ৪৩০ জন। জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন জানান, হোমনায় চারজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় তিনজন, দেবিদ্বারে চারজন, চান্দিনায় তিনজন, মনোহরগঞ্জে দুজন, দাউদকান্দি, তিতাস ও বরুড়া উপজেলায় একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন অফিস সূূত্র জানায়, রবিবার পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে মোট ১১ হাজার ৯১০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ১০হাজার ৩২৮ জনের। এ দিন মনোহরগঞ্জে একজন মারা যায়। জেলায় করোনায় মোট মারা যান ৪১ জন। দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তির করোনা পজিটিভসহ ২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুর সদরে-১৫, বীরগঞ্জে-৩, কাহারোলে-১, পার্বতীপুরে-২, বোচাগঞ্জে-১ (মৃত ব্যক্তি) ও চিরিরবন্দরে দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২১২ জন, নারী ৭৬ জন ও শিশু ১৭ জন রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ইমামুল হক (৬৬) বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শুক্রবার রাতে ভর্তি করা হয় এবং নমুনা নেওয়া হয়। পরে শনিবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায়। শনিবার রাতে পাওয়া রিপোর্টে যায় তিনি করোনা পজিটিভ। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে ১২২ জনের নমুনার ফলাফলে নতুন ২৪ জনের করোনা পজিটিভ (একজনের মৃতসহ), ২টি নমুনার ফলোআপ পজিটিভ এবং বাকি ৯৬টির ফলাফল নেগেটিভ। ফেনী : ফেনীতে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও ১৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হলো ২৬৪। রবিবার নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ ফল পাওয়া যায় বলে সিভিল সার্জন সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন। সিভিল সার্জন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১৬ জন। এদের মধ্যে দাগনভূইয়ার দুজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ আটজন, সোনাগাজীর এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজন ও পরশুরামে একজন রয়েছেন। শনাক্ত ১৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১২ ও মহিলা চারজন।
সাভার : সাভার উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত এ উপজেলায় মোট ৫৬২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ শনিবার এ উপজেলায় ২০ জনের এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ জন। তিনি বলেন, এ উপজেলায় মোট ২৪২৬ জনের পরীক্ষায় ৫৬২ জনের পজিটিভ এসেছে। বগুড়া : ব্যাংক কর্মকর্তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) একটি শাখা লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের পাঠান মির্জাপুর চৌমাথা বাজারে অবস্থিত শাখাটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দ্রুত শাখাটি খুলে দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মির্জাপুর চৌমাথা বাজার শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল ইউসুফ জানান, এক কর্মকর্তার (৩২) করোনা উপসর্গ দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার টিএমএসএস হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেওয়া হয়। শনিবার রাতে পাওয়া ফলাফলে তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিবার থেকে ব্যাংকটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গাজীপুর : জেলায় নতুন ১৩৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যা এ জেলায় এক দিনে শনাক্তের রেকর্ড বলে জানান গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান। তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে পাঠানো ৬১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন আরও ১৩৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদরে ১৩২ জন এবং কালিয়াকৈরে ৫ জন। এ পর্যন্ত গাজীপুরে ১৩ হাজার ৩৮৮ জনের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ জনের বলে জানান তিনি। চাঁদপুর : চাঁদপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন মারা গেছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শহরের দক্ষিণ গুনরাজদীতে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন আগে। ৪ জুন সকালে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাড়িতেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল সকালে তিনি মারা যান।
রাজবাড়ী : জেলার কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসানসহ নতুন করে আরও সাতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে বিষয়টি জানিয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে রাজবাড়ীতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩ জন। তিনি জানান, সর্বশেষ রাজবাড়ী জেলার ১২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে সাতজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আক্রান্তদের মধ্যে কালুখালী থানার ওসি, পাংশার দুজন এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার চারজন রয়েছেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন