সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের কৃষকরা আগামী শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরমধ্যে পুরোদমে চলছে রাসহ জমি প্রস্তুতের কাজ। আগাম সবজি চাষের মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সেই দিকে নজর দিচ্ছে কৃষকরা। ফলে আগাম সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে নতুন করে অনেক কৃষকের।
জানা যায়, গত কয়েক বছর থেকে সিলেট অঞ্চলে বেড়েছে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ। আর এসব চাষাবাদ করে বাড়তি টাকাও আয় করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা থেকেই বেশি আবাদ করা সম্ভব। গত বছরের মতো আবহাওয়া থাকলে এ বছরেও লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি অর্জিত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি মৌসুমে বন্যায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেসব কাটিয়ে উঠতে জেলার গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকরা আগাম সবজি চাষ করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিন এসব জমিতে পরিচর্যা করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও এলাকায় গেলে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগাম জাতের সবজির উৎপাদন ভালো হবে। এসব জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপিসহ শীতকালীন শাকসবজি রোপণের জন্য। শীতের আগেই যদি এসব সবজি আবাদ করা যায় তাহলে বাজারের দর বেশি পাওয়া যায়। সেই চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও এলাকার কৃষক হাসনাত ইসলাম বলেন, গত বছর চার বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমির সবজি বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তাই এ বছর আরও দুই বিঘা বেশি জমিতে চাষাবাদ করব। প্রতি বিঘা জমিতে টমেটোর চারা থেকে শুরু করতে ফসল আসার আগ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আগাম সবজি চাষ করতে তুলনামূলক একটু বেশি খরচ হয় বলে তিনি জানান।
আরেক কৃষক জামাল আহমেদ বলেন, আগাম সবজি চাষ করলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এজন্যে গত কয়েক বছর থেকে প্রতিনিয়ত এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম সবজি চাষে ঝুকছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। এসব সবজি চাষে যত্ন অনেক বেশি নিতে হয়। তাছাড়া এসব সবজিত চারা, গাছ বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত হয়, সেসময় বিভিন্ন কীটনাশক সবজিতে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা তাদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকেন বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, এ বছর সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি, এ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। তবে গত বছরের মতোই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর শাক-সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার ৫২০ হেক্টর আর আবাদ হয় ৫৪ হাজার ২৭৩ হেক্টরে।
তিন দফা বন্যায় সিলেটের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কোন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমের রোপা আমনের ৪ হাজার ৮শ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, সিলেটের কৃষকরা আগাম সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গত বছর টমেটো, ফুলকপি, আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন, ফলে কৃষকরা এসব চাষে ঝুঁকছেন। আমরাও মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সকল উপজেলার মাঠ পর্যায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে তারা যেন এসব চাষাবাদ নজরদারি করেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। কোনো সবজি যেন রোগাক্রান্ত না হয়। আমরা জেলা কর্মকর্তারাও নিয়মিত এসব কার্যক্রম তদারকি করছি।
তিনি বলেন, বন্যার মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আগাম সবজি চাষে লাভবান হবেন। গত বছরের ন্যায় এ বছরও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছি।