মহামারীর এই দুর্যোগের সময় শিশুর মনোজগতের বৈকল্য কাটাতে সম্ভাব্য সব ধরনের বিকল্প কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল। তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাসগুলোর বিস্তার বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলড্রেস পরে এসব ক্লাসে শিশুদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। ড. মোহিত কামাল বলেন, শিশুদের জন্য স্কুলে যাওয়া সব সময়ই আনন্দের বিষয়। তারা স্কুলে যাবে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবে, মাঠে খেলবে, শিক্ষক-শিক্ষিকার আদর পাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় স্কুলে না যেতে পেরে তারা হতাশ ও বিরক্ত। হতাশা থেকে রাগ হয়, অল্পতে ক্ষেপে যায়, পড়তে চায় না, মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে- এসব সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিন্তু ক্ষণস্থায়ী নয়। এটি দীর্ঘকাল থাকবে। তাই সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের উপায় বের করতে হবে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, পালনযোগ্য সমাধান বের করা। মানে বাধা পেয়ে আটকে থাকা যাবে না। বিকল্প কোনো পথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরনের বিকল্প সমাধান খুঁজতে হবে।
মোহিত কামাল বলেন, হতাশাগ্রস্ত শিশুদের জন্য এখন বিকল্প উপায় হলো অনলাইন ক্লাস। কিন্তু সবাই তো আর এই সুবিধা পাবে না। গ্রামেগঞ্জে তো আর এই সুবিধা নেই। সেখানেও স্কুলের সময় অভিভাবকদের এই স্কুলের মতো করে পড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া ইউনিসেফ থেকে শিশুদের উপযোগী করে মীনা কার্টুনের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলার উপায় দেখানো হয়েছে। সেগুলোও শিশুদের দেখানো দরকার। এতে শিশুদের মনস্তত্ত্বে সচেতনতা আসবে।
তিনি বলেন, এই সময় শিুশুদের ওপর কোনোভাবেই বকাঝকা করা যাবে না। বরং শিশুটি কীভাবে করোনাকে দেখছে তা গল্পচ্ছলে বের করতে হবে। যদি তার মনের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি থাকে তা দূর করতে হবে। করোনা সম্পর্কে সহজ ভাষায় তাকে কিছু তথ্য দিতে হবে। বোঝাতে হবে কেন আমরা বাইরে যাচ্ছি না। তাকে বোঝাতে হবে, বাইরে করোনাভাইরাস আমাদের আক্রমণ করতে পার, তাহলে আমরা অসুস্থ হয়ে যাব। কিন্তু ঘরটা মুক্ত আছে। আসলে শিশুকে তার বোধের লেভেলে গিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। বাচ্চাগুলোকে আনন্দময় করে রাখতে হবে। বাচ্চাদের দীর্ঘস্থায়ী করোনা মোকাবিলার জন্য সাহসী করতে হবে। তাদের প্রস্তুত করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে অভিভাবকদের। শিশুদের সঙ্গে তাদের কোয়ালিটি টাইম পাস করতে হবে। গল্প করতে হবে, গল্প শোনাতে হবে।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন