এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে গেছে এ পরীক্ষা। কবে নাগাদ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেটিও জানে না পরীক্ষার্থীরা। এখন এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। তবে আসন্ন অন্য পাবলিক পরীক্ষা পেছানের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে সারা দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন পরীক্ষা নিয়ে সংকটে রয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)-জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার্থীরাও। প্রতি বছর নভেম্বরের শেষদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি)-ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে প্রভাব ফেলতে পারে খুদে এ পরীক্ষার্থীদের ওপরও।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। কতটুকু সিলেবাসে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেটিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বলা যাবে। সমাপনী পরীক্ষা পেছানো না পেছানো নির্ভর করছে করোনা স্বাভাবিক হওয়ার ওপর।
তথ্যমতে- এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষার টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষার আয়োজন করা হয় অক্টোবর মাসে। নভেম্বরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করতে হয়। সে হিসেবে সামনে কয়েক মাস সময় থাকলেও সিলেবাস কতটুকু শেষ করা যাবে তা নিয়ে ভাবছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষার্থীরা বর্তমানে একটা সংকটে রয়েছে। যদিও সংসদ টেলিভিশন বাংলাদেশ ও অনলাইনের মাধ্যমে কিছু ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতিতে বাসাবাড়িতে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোনো পাবলিক পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মু. জিয়াউল হক আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিকে কেন্দ্র করে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শামসুন্নাহার কলি এ প্রতিবেদককে বলেন, কবে এইচএসসি পরীক্ষা হবে তা বুঝতে পারছি না। পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় সময় পাব না। তাই এখন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব সেটি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছি। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় আরও দীর্ঘ হলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পর ফল প্রকাশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে। ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া কয়েক মাসজুড়ে চলে। আমরা এ সময় কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন থেকে যেন বড় সময় নষ্ট হয়ে না যায়, বড় ধরনের সেশনজটের সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন