ধর্ম ডেস্ক: বছর ঘুরে আবারও চলে এসেছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে প্রতি বছর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রাখেন সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে।
মুসলিমদের বিশ্বাস, স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ এবং বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে এ মাসে নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ সরল একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয়, কিন্তু এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান। রোজা নিয়ে সেরকম সাধারণ ভুল ধারণার বিস্তারিত জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
চলুন জেনে নেই:
দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়
অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অল্প পরিমাণ পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। এছাড়া মিন্টের গন্ধ কম এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন। বেশি চিন্তা হলে গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। তাদের মতে, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গে না।
শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে
শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে তাই নয়। আরো কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।
অসাবধানতা বশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়
ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা বৈধ থাকবে, যদি না আপনি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি অনিচ্ছাকৃত-ভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এই ভুল এড়ানো সম্ভব। এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। অজুর সময় আপনি শুধু কুলি করাই শ্রেয়।
ওষুধের ব্যবহার
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ। এমসিবি বলেছে, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ । সেহেরির আগে ও ইফতারির পর তা খেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা? কোরআনে পরিস্কার বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলুন।
যেকোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। এমসিবি বলছে – শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙ্গা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন।