প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় পুলিশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। একই কারণে আরেক মামলায় ১৪ জুন গ্রেফতার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক সিরাজুম মুনিরাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কাজী জাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অ্যাডভোকেট তাপস কুমার সাহ বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, কাজী জাহিদুর রহমান গত ১, ২ ও ৫ জুন নিজের ফেসবুক ওয়ালে মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বাজে ভাষায় মন্তব্য করেন। সেখানে একটি পোস্টে মোহাম্মদ নাসিমের ছবি ও নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি পোস্টগুলোয় মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করা হয়। এজাহারে বলা হয়, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও সংক্ষুব্ধ। কাজী জাহিদুর রহমান রাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত। রাবির শিক্ষক হলেও তিনি নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদে ছিলেন। নাসিমকে কটূক্তির পর মঙ্গলবার জাহিদুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবাস চন্দ বোস। মোহাম্মদ নাসিম ১ জুন রাতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ‘তার অসুস্থতা নিয়ে’ ব্যঙ্গ করে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন কাজী জাহিদ। স্ট্যাটাসে সরাসরি নাসিমের নাম উল্লেখ না থাকলেও বিক্ষিপ্তভাবে ‘উগ্র’ ভাষা ব্যবহার করে নাসিমকে তিনি পরামর্শ দেন- ‘করোনাকে ঘুষ দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসার’! পরদিন ২ জুন বিকালে ফের স্ট্যাটাস দেন কাজী জাহিদ। সেখানেও নাসিমের নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, ‘তার আমলে’ স্বাস্থ্য খাতে অনেক অনিয়ম হয়। ‘অসুস্থ নাসিমকে’ ইঙ্গিত করে অক্সিজেনের পরিবর্তে তাকে কার্বন ডাই অক্সাইড দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। আর ৫ জুন ‘কাজ করে না এমন ভেন্টিলেটর দিয়ে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক’ এমন বাক্যও লেখেন। ওই স্ট্যাটাসে সব শেষে নাসিমকে ইঙ্গিত করে ‘এসব চোর’ লেখা হয়। রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু গত ১৫ জুন বিকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।

জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি : রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দফতরের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুনিরাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি এখন জেলহাজতে থাকায় ডাকযোগে বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বেরোবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মহিবুল ইসলাম জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত তাজহাটের বিচারক রিমান্ড শুনানি শেষে মুনিরাকে দুই দিন জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। মুনিরা ১৩ জুন সন্ধ্যার দিকে তার নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে নাসিমকে নিয়ে কটূক্তি করলে তা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই দিন গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে তাজহাট থানায় ডিজিটাল আইনে মামলা করেন। রাত সোয়া ২টার দিকে মুনিরাকে গ্রেফতার করা হয়।