করোনা শনাক্তে কম নমুনা পরীক্ষা সত্ত্বেও দৈনিক আক্রান্তে বিশ্বের মধ্যে নবম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। তবে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় আক্রান্তের হারে বাংলাদেশ এখন পঞ্চম। বরাবরের মতো দৈনিক আক্রান্তে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। গত ১৬ জুন ৩ হাজার ৮৬২ জন করোনা রোগী শনাক্তের মধ্যে দিয়ে মেক্সিকোকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ উঠে আসে নবম স্থানে। এদিকে গতকাল দেশে করোনা শনাক্ত হয় ৪ হাজার ৮ জনের যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। মৃত্যু হয় ৪৩ জনের।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর তিন মাসে মোট শনাক্তে ১৭০টিরও বেশি দেশকে পেছনে ফেলে ১৮তম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। তবে দৈনিক শনাক্তে বাংলাদেশ এখন নবম। নমুনা পরীক্ষার বিচারে আক্রান্তের হারে পঞ্চম। তিন মাসে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ও হার দুটোই বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রথম রোগী শনাক্তের ২২ দিনের মাথায় ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। তার ঠিক এক মাসের মাথায় ৩০ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৯৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৫৬৪ জন। আক্রান্তের হার ৮ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ৩১ মে আক্রান্তের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ওইদিন ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৮৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ২ হাজার ৫৪৫ জনের। এই বৃদ্ধির হার প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল এ হার ছিল ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র সামনে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের উপরে উঠলে তা বিপদসংকেত। এই হার বেশি হওয়ার অর্থ অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি নমুনা পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছে যারা দ্রুত রোগ ছড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশে শনাক্তের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে চার গুণেরও বেশি। আর ৫৭ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার নিয়ে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিপদসীমায় আছে ব্রাজিল। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো (৪০ শতাংশ), চিলি (৩৪ শতাংশ), সৌদি আরব (২৪ শতাংশ) ও বাংলাদেশ (২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ)। তবে সর্বাধিক নমুনা টেস্টের কারণে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। এদিকে দৈনিক শনাক্তে ব্রাজিলের পরপরই আছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চিলি, পাকিস্তান, সৌদি আরব, পেরু, বাংলাদেশ ও মেক্সিকো।
এদিকে গতকাল দেশে প্রথমবারের মতো এক দিনে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে কানাডায় গতকাল পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৪৬৭ জন। আর দেশটিতে প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে চারশ’র মতো মানুষ। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আজই শনাক্তের রেকর্ডে কানাডাকে অতিক্রম করবে বাংলাদেশ। গত ১৩ জুন আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে অতিক্রম করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৭ হাজার ৫২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ৪৩ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩০৫ জনে। দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শনাক্ত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ১৮৯ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৪৪টি নমুনা। গতকাল মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে চারজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চারজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে চারজন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন করে এবং সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন করে। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৭ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন। আর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছে একজনকে। বিভিন্ন জেলার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা। দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪১ জন। কুমিল্লা : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জেলায় নতুন করে ৯১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ২১৭ জন। চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে আরও ১৭৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার ৫৮৫ জন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২৪ জন। বান্দরবান : জেলায় নতুন করে ৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৩ জনে। গোপালগঞ্জ : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় গোপালগঞ্জ জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪০২ জনে দাঁড়িয়েছে। নড়াইল : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও দুজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৮ জন চিকিৎসক ও ১৪ জন হাইওয়ে পুলিশের সদস্যসহ মোট ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বগুড়া : জেলায় নতুন করে ১৮৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় কভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৭০২ জন। করোনায় এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট : সিলেট বিভাগে নতুন করে ১৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৩ জন। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন