কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তিন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানা পুলিশের ওসি এবং ওই এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এ হামলা চালায়। এসময় ছিনিয়ে নেয়া হয় ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন। এ ঘটনায় খলিলুর রহমানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১২ জনের নামে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, আহত সাংবাদিক নাজমুল হোসেন, রেডিও চিলমারীর জেলা প্রতিনিধি ভুবন কুমার শীল ও ক্যামেরাপারসন কবির হোসেন শনিবার সকালে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত তিস্তা নদীর তথ্য সংগ্রহ করতে যান।

দুপুর ২টার দিকে ফেরার পথে নাজিমখান ইউনিয়নের মনারকুটি মৌজাস্থ একটি স-মিলের সামনে পাকা রাস্তায় স্থানীয় লোকমুখে জানতে পারেন, একই এলাকার খলিলুর রহমান ও শামসুন্নাহার গংয়ের মধ্যে জমিজমার বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছিল।

সালিশ বৈঠক শেষে সবাই রাস্তায় চলে আসে। ভিড় দেখে সেখানে সাংবাদিকরা দাঁড়ালে বিরোধপূর্ণ একটি পক্ষের লোকজন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এসময় খলিলুর রহমান লাভলু (৪৫) ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান। খলিলুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন।

এসময় তার মদদে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সোহেল (৩৫) ও কোয়েল (৩৮), আক্কাছ আলী (৩৫), রাজারহাট মল্লিকবেগ এলাকার সেতু মিয়া (৩০), দলদলিয়া কাজী পাড়ার লুৎফর রহমান, রাজারহাট মনারকুটি এলাকার মাসুদ মিয়া (২৪), নাজিমখান তেলিপাড়ার রেজাসহ (৩২) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন সংঘবদ্ধভাবে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে সাংদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

এসময় সোহেল ক্যামেরাপারসন কবির হোসেনের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসলে সাংবাদিক নাজমুল হোসেন ও ভুবন কুমার শীলের ওপর অপর আসামি ও অজ্ঞাতরা এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। এসময় ক্যামেরা, মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হলেও ২টি মেমোরি কার্ড তারা রেখে দেয়। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন প্যাকেজ সংরক্ষিত ছিল।

এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় ক্যামেরাপারসন কবির হোসেন বাদী হয়ে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু ও সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাংবাদিকদের ওপর এ বর্বর হামলা মেনে নেয়া যায় না। হামলার শিকার সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনকে নিয়ে রোববার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এজাহার পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজারহাট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজু সরকার জানান, ঘটনার তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।